দুদকের ২ মামলা শতকোটি টাকার মালিক পলিটেকনিক ইনস্ট্রাক্টর হুমায়ুন!
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
হুমায়ুন কবীর। পেশায় শিক্ষক। বর্তমানে ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইনস্ট্রাক্টর (নন-টেক) হিসেবে কর্মরত। তার বাবা একজন কাঠমিস্ত্রি ছিলেন আর স্ত্রী গৃহিণী। পেশাগত অবস্থান নিম্নস্তরের হলেও ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে ৫১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ জমির মালিক। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১০০ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়াও আছে অস্থাবর অনেক সম্পদ।
ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর হুমায়ুন কবীর, তার স্ত্রী ও পিতার নামে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। গত ৫ মার্চ দুদকের ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শাহাদত হোসেন বাদী হয়ে মামলা দুইটি দায়ের করেন। সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় যদিও তাদের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ১৭ লাখ টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ এবং সাড়ে ১৬ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ওই সম্পদের প্রকৃত মূল্য অনেক বেশি। কারণ, দুদক দালিলিক মূল্য আমলে নিয়ে মামলায় অভিযোগ নিয়েছে।দুদক সূত্রে জানা যায়, প্রথম মামলায় ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর (নন-টেক) মো. হুমায়ুন কবীর, তার স্ত্রী বেবী আলিয়া হাসনাত ও পিতা কাঠমিস্ত্রি মো. আলী হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে সম্পদ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরসহ দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১৩ কোটি ৬ লাখ ১২ হাজার ১৪০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য প্রদান ও ১৫ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার ৮২৯ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ধারা ২৬(২) ও ধারা ২৭(১) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ধারা ৪(২), ও ধারা ৪(৩) এবং দন্ডবিধি’র ১০৯ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, দুদক থেকে হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিলে ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর সম্পদের হিসাব দাখিল করেন। যেখানে মো. হুমায়ুন কবির ৪ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ৫৫০ টাকার স্থাবর ও ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪৭ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৪ কোটি ৩৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৯৭ টাকার সম্পদের ঘোষণা করেছেন। কিন্তু যাচাইকালে তার নামে ১৭ কোটি ৩৭ লাখ ৯২ হাজার ৬৯০ টাকার স্থাবর ও ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪৭ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১৭ কোটি ৪১ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৭ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ হুমায়ুন কবীরের নামে ১৩ কোটি ৬ লাখ ১২ হাজার ১৪০ টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি, যা তিনি গোপন করেছেন।
অন্যদিকে দুদকের অনুসন্ধানে ১৫ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার ৮২৯ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ থাকার দালিলিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, হুমায়ুন কবীর তার ক্রয়কৃত জমির অধিকাংশ তার স্ত্রী বেবী আলিয়া হাসনাত ও তার পিতা আলী হোসেনের নামে ক্রয়ের কিছুদিন পর নিজ নামে হেবা করে নিয়েছেন। নিজের অবৈধভাবে অর্জিত টাকা স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করতেই এমন কৌশল গ্রহণ করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া তার নামে স্কাবো মেডিকেল টেকনোলজি (প্রাইভেট) লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৩৫০টি শেয়ারের তথ্য মিলেছে, অন্যদিকে তাদের সিঙ্গাপুর ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে গমনাগমনের তথ্যও মিলেছে দুদকের অনুসন্ধানে।
দ্বিতীয় মামলায় বেবী আলিয়া হাসনাত, তার স্বামী মো. হুমায়ুন কবীর ও তার শ্বশুর আলী হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। পেশায় গৃহিণী বেবী আলিয়া হাসনাত ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। সেখানে তিনি ১ কোটি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮৯ টাকার সম্পদের ঘোষণা দেন। কিন্তু যাচাইকালে স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে ৪ কোটি ৬৫ লাখ ২ হাজার ৪৩৫ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ ৩ কোটি ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। যেখানে তার স্বামী ও শ্বশুরকে সহযোগিতার জন্য আসামি করা হয়েছে।
হুমায়ুন কবীরের যত সম্পদ
মো. হুমায়ুন কবীর ও তার স্ত্রীর বেবী আলিয়া হাসনাতের নামে মোট ৫১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ জমির দালিলিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার বাজার মূল্য ১৪০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও মৌজা মূল্য অনেক কম।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মো. হুমায়ুন কবীরের নামে ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে মোট ৪৪৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ জমির দালিলিক প্রমাণ মিলেছে। যার মধ্যে গাজীপুরের টঙ্গি পৌরসভায় ৩ দশমিক ০৪ শতাংশ জমি বাদে সবই ময়মনসিংহ সদরের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকার জমি। এই জমিগুলো ২০১২ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন কৌশলে মালিকানা অর্জন করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। যা সম্পদ বিবরণীতে প্রদর্শিত মূল্য ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ৫৫০ টাকা। আর মৌজা হিসাবে দালিলিক মূল্য পাওয়া গেছে ১৭ কোটি ৩৭ লাখ ৯২ হাজার ৬৯০ টাকা। বাস্তবে যার মূল্য ১১৫ থেকে ১২০ কোটি টাকা বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে তার স্ত্রীর বেবী আলিয়া হাসনাতের নামে ৭০ শতাংশ জমির মালিকানা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাজধানীর শ্যামলীতে সাড়ে ৬ শতাংশ জমি রয়েছে, বাকিগুলো ময়মনসিংহে। যার মৌজা মূল্য ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা হলেও বাস্তবে তার মূল্য ১৫ থেকে ১৮ কোটি টাকা হবে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে পলিটেকনিক ইনস্ট্রাক্টর হুমায়ুন কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি যতটুকু জানি তদন্ত চলমান ছিল। মামলা হয়েছে কিনা জানা নেই। আমার যা সম্পদ তার হিসাব জমা দিয়েছি। এর বাইরে সম্পদ নেই। অর্জিত সব সম্পদের বৈধ উৎস রয়েছে। আমার কোনও অবৈধ সম্পদ নেই।