দেশব্যাপী বইছে ভোটের হাওয়া

প্রকাশিত: ১:৩৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৩

দেশব্যাপী বইছে ভোটের হাওয়া। দল বেঁধে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার রীতি দীর্ঘদিনের। নির্বাচন এলে দেশে উত্সবের আবহ তৈরি হয়। সাধারণ মানুষ নিজ নিজ এলাকায় ছুটে যান। নির্বাচনি আয়োজনে নারীদের থাকে বাড়তি আগ্রহ। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোটটি নিজে দেওয়ার ইচ্ছেটুকু থাকে অটুট। অনেকে প্রথমবার ভোটে অংশ নিচ্ছেন। সেই উচ্ছ্বাসও আছে।
বয়স যেমনই হোক, পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন কিংবা ভোটকেন্দ্রের আচরণবিধি সম্পর্কে অনেক নারীরই নেই সঠিক ধারণা। তাই অনেকে শঙ্কা থেকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন। যেকোনো শঙ্কা ছাড়াই নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট প্রদান করুন। তাই আমাদের এই আয়োজনে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাচ্ছেন ফাতিন আহমেদ।
প্রথমেই আপনার নির্বাচনি এলাকা সম্পর্কে জানুন

আপনি কোন এলাকার ভোটার? সেটি আগে জানা জরুরি। কারণ আপনি যে এলাকার ভোটার একমাত্র সেখানেই ভোট দিতে পারবেন। যখন আপনি নির্বাচনি এলাকা সম্পর্কে ধারণা পাবেন তখন আপনার জন্য ভোটের প্রার্থী নির্বাচন করা সহজ হবে। আপনার নির্বাচনি এলাকায় কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, খোঁজ নিন। বাড়িতে অন্য নারী সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ও উপযুক্ত প্রার্থীর বিষয়ে ধারণা দিন। তবে নিজের ভাবনা চাপিয়ে দেবেন না। তাদের বাছাই করতে দিন।

ভোটার স্লিপ সংগ্রহ করুন

নির্বাচনি এলাকা সম্পর্কে ধারণা হওয়ার পর অবশ্যই ভোটার স্লিপ সংগ্রহ করতে হবে। আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ড না থাকলে ভোটার স্লিপ রাখতে হবে। ভোটার নিবন্ধন আপিলের সময় ফর্মের একটি অংশ আপনাকে দেওয়া হয়েছে। সেটিই ভোটার স্লিপ। এটি হারিয়ে গেলে ফেরত পাওয়ার উপায় রয়েছে।

ভোট দিতে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগে না। অনেকেই জাতীয় পরিচয়পত্রকেই ভোটার আইডি কার্ড মনে করে থাকেন। এটি একদমই ভুল ধারণা। তবে ইভিএমে ভোট দিতে গেলে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে যাওয়া উত্তম। তা না হলে আঙুলের ছাপ দিয়ে আপনাকে পরিচয় নিশ্চিত করে ভোট দিতে হবে। কিছু বিষয়ে সতর্ক হওয়া ভালো। ভোটকেন্দ্রে ঢোকার আগে অবশ্যই ভোটের স্লিপ সংগ্রহ করে সঙ্গে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলের অফিস বা প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ভোটের আগে স্লিপ সরবরাহ করা হয়। স্লিপ না পেয়ে থাকলে আপনি যে এলাকার ভোটার সেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অফিসে অথবা ইউনিয়ন পরিষদ ও চেয়ারম্যান কার্যালয়ে গিয়ে স্লিপ জোগাড় করতে হবে।
প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার দিকে রাখুন মনোযোগ

নির্বাচনের জন্য প্রার্থী বাছাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ এক বিষয়। আবার ভোটারের সচেতনতাও ব্যাপক জরুরি। নির্বাচনের সময় প্রচার-প্রচারণার বিষয়টি মনোযোগে রাখা অত্যন্ত জরুরি। যে প্রার্থী প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চান তিনি সচরাচর উন্নয়নের চেষ্টা করেন। যদিও আমাদের দেশে এমন একটি ধারণা রয়েছে যে ভোটের সময়ই অনেকে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেক্ষেত্রে আপনি প্রার্থীদের অতীত রাজনৈতিক রেকর্ড দেখুন। প্রতিটি জনপ্রতিনিধির নিজস্ব কিছু কাজ থাকে। তারা বিভিন্ন এলাকায় কিছুটা হলেও কাজ করেন। তাদের এই কাজের ধারাবাহিকতার দিকে খোঁজ নিন। আজকাল অনলাইনে তথ্য পাওয়া সহজ। আবার বিভ্রান্ত হওয়াও সহজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কোনো প্রচার-প্রচারণার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করবেন না। তাদের সমর্থকগোষ্ঠী কতটা তা দেখুন। অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়েই নির্বাচনে অংশ নেন। এসব খুঁটিনাটি বিষয় যাচাই করুন।

ভোট দেওয়ার পদ্ধতিগুলো জেনে নিন

অনেকে ভোট কীভাবে দেবেন জানেন না। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যালট পেপার ভাঁজ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনেকেই কাজটি সঠিকভাবে করতে পারেন না বলে সেসব মূল্যবান ভোট বাতিলের ঝুড়িতে গিয়ে পড়ে। ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর মার্কায় সিল দেওয়ার পর এমনভাবে ভাঁজ করে ব্যালট বাক্সে ফেলতে হবে, যাতে সিলের কালি অন্য মার্কায় না ছড়ায়। টিভি চ্যানেল বা অনেক জায়গাতেই ব্যালট পেপার ভাঁজ করা বা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ব্যালট পেপারের বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা দেওয়া হয়েছে।

ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ, ম্যাচ, লাইটার, ধারালো বস্তু, ব্যাগ বহন, মোবাইল ফোন সবই নিষিদ্ধ। শুধু ভোটারের স্লিপ নিতে হবে। সামাজিক মাধ্যমের দিকে ঝুঁকে আছে এই প্রজন্ম। নিজের যেকোনো কাজকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন অনেকেই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেছেন নির্বাচন কমিশন। ভোটকেন্দ্রের ভেতরের কোনো ছবি, ব্যালটের ছবি বা সেলফি তোলা একেবারে নিষিদ্ধ। তাছাড়া ভোটকেন্দ্রে চেক-ইন একেবারে নিষিদ্ধ, আইনত দণ্ডনীয় অপরাধও। ভোট দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে এসে নিশ্চিন্তে চেক-ইন দিতে ও সেলফি তুলতে পারবেন। ভোট দিতে যাওয়ার আগে এসব বিষয়ে ধারণা নিন।

চলছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। যে প্রার্থী তাদের প্রচারণার অংশ হিসেবে ভোটার এডুকেশনকে গুরুত্ব দিচ্ছে তাদের বাছাই করতে পারেন। কারণ দেশে ভোটার এডুকেশনের বিষয়টি জরুরি। দেখুন কোন প্রার্থী আপনার ভোট দেওয়ার পদ্ধতি সহজ করে দিচ্ছে।
শারীরিক সমস্যায় নেওয়া যাবে সঙ্গী

কোনো ভোটার বৃদ্ধ, অসুস্থ বা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলে সঙ্গে একজন সহায়তাকারী নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে সাহায্যকারীর সঙ্গে ভোটার আইডি থাকতে হবে। বাড়িতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ভোট দিতে হবে না? তারা আগ্রহী হলে সঙ্গী রাখার সুযোগ আছে। সেই সুযোগে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিন।

ভোটের দিন রাজনীতিকদের দায়িত্ব

ভোটের দিন প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা নির্বাচনের প্রার্থীরা নানাভাবে ভোটারদের সাহায্য করেন। তাদের অবস্থান ও জনগণকে সাহায্য করার প্রক্রিয়াও অনেক সময় যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে সাহায্য করে। সঠিক পদ্ধতি এটি কি-না তা নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো, বরং ভাবতে হবে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে কোন প্রার্থীর প্রতিনিধিরা ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছে— ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। কোনো অভিযোগ থাকলে সাহায্য চেয়ে দেখুন। যাচাই করুন। ভয় পাবেন না। ভোটারের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। আপনার ভোট মূল্যবান। একদম ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যাচাই করুন।