দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিন মাসে ৩ কর্মসূচি আ.লীগের

প্রকাশিত: ১০:২৫ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কোরবানির ঈদের পর বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো লাগাতার কর্মসূচিতে যাওয়ার আভাস দিচ্ছে। রাজনীতির মাঠ দখলে রেখে আন্দোলন মোকাবিলা ও নির্বাচনি কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়ার কৌশল নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। এর অংশ হিসেবে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর—এই তিন মাসে তিন ধরনের কর্মসূচি পালন করবে দলটি। এরমধ্যে রয়েছে—জুলাইয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে সমাবেশ-বিক্ষোভ, আগস্টে শোক পালনের আলোচনা সভা এবং সেপ্টেম্বরে নির্বাচনি জনসভা। এতে নতুন উদ্যম, নতুন পরিকল্পনা এবং আধুনিক কৌশল নিয়ে নির্বাচনি মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। সেই সঙ্গে বিরোধীদের অপপ্রচার ও গুজবে বিভ্রান্তি ঠেকাতে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে নামবে দলটি।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, রাজনীতির মাঠ ততই উত্তপ্ত হচ্ছে। এতদিন বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নরম কর্মসূচি পালন করে আসছে। তাদের মোকাবিলায় আওয়ামী লীগও শান্তি ও প্রতিবাদ সমাবেশের মতো ঠান্ডা কর্মসূচি পালন করেছে। কোরবানির ঈদের পর বিরোধীরা গরম কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারে। তার বিপরীতে আওয়ামী লীগও শক্ত কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে। তবে কোনও ধরনের সংঘাতে যাবেন না সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। বরং নতুন পরিকল্পনা নিয়ে নতুন উদ্যমে আধুনিক কৌশল নিয়ে এগোবেন তারা।

ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সূত্রমতে, নির্বাচন সামনে রেখে ঈদের পর একদিকে রাজপথে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপিসহ অন্য বিরোধী দলগুলো। অপরদিকে সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশ থেকে পরিকল্পিতভাবে নানা ধরনের অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারকে দুর্বল করতে এবং ক্ষমতাসীন দলের মনোবল ভাঙতে নানা কূটনৈতিক চাপ তৈরির চেষ্টা চলছে। ফলে আওয়ামী লীগকেও একসঙ্গে এই তিনটি ফ্রন্টে লড়তে হচ্ছে। সে জন্য দলকে সংগঠিত করে রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠ দখলে রাখা, সামাজিকমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সব অপপ্রচার ও গুজবের দ্রুত এবং তথ্যবহুল জবাব দেওয়া, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা ও বিএনপি আমলের অপকর্ম জনগণকে জানানো এবং কূটনৈতিক নানা চ্যানেলে জোর তৎপরতা চালাবে আওয়ামী লীগ।

দলের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের চলমান শান্তি সমাবেশ, প্রতিবাদ সমাবেশ, আলোচনা সভা ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অন্যান্য কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে জুলাই মাসজুড়ে। তবে এসব কর্মসূচির সংখ্যা বাড়বে, যাতে দলীয় নেতাকর্মীরা আরও বেশি চাঙা থাকেন। এই চাঙাভাব নিয়েই শোকের মাস আগস্টে টানা কর্মসূচি পালন করা হবে। এরমধ্যে আলোচনা সভার পাশাপাশি সমাবেশও থাকবে। এসব কর্মসূচিতে নির্বাচনি আমেজ সেভাবে না থাকলেও বিএনপির নানা অপকর্ম তুলে ধরা, নির্বাচন বানচালে আবারও বিএনপির তৎপরতা তুলে ধরা এবং তাদের অতীতের জ্বালাও-পোড়াও সামনে আনা হবে। আর সেপ্টেম্বরে নির্বাচনকেন্দ্রিক জনসভাসহ নানা কর্মসূচি থাকবে সরকারি দলের—এতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা, ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং বিএনপির মনোবল দুর্বল করার চেষ্টা থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ও নীতিনির্ধারক দুই জন নেতা বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন কর্ম কৌশল ঠিক করছে আওয়ামী লীগ। এবারের নির্বাচনি প্রচার এবং ভোটে জিততে অতীতের থেকে ভিন্নতর এবং আধুনিক কৌশল নেওয়া হবে। এই কৌশল কেমন হবে, তা বলার সময় এখনও আসেনি। এই কৌশলের অংশ হিসেবে নির্বাচনি প্রচারে নতুনত্ব আসবে। জনসভার পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমে প্রচারাভিযান শক্তিশালী করা হবে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, আধুনিক কৌশলের অংশ হিসেবে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে সামাজিকমাধ্যমসহ অনলাইনে সক্রিয় হবে আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট আপলোড করা হচ্ছে। টুইটার, টিকটক ও ইউটিউবেও নানা ধরনের কনটেন্ট ছাড়ছে আওয়ামী লীগ। এগুলোতে এখন বিএনপি আমলের নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হচ্ছে, যা জুলাই মাসেও অব্যাহত থাকবে। আগস্টে শোকের মাস হিসেবে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড ও বিএনপির ভূমিকা নিয়ে কনটেন্ট আপলোড করা হবে। সেপ্টেম্বরের কনটেন্টের মধ্যে উল্লেখযোগ্য থাকবে— নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন ইস্যু। এ ক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের মাধ্যমে সুফল পেতে চায় আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের একটা পরিবর্তন আসবে। পুরনো কৌশল থেকে বেরিয়ে আধুনিক কৌশলে যাবে দল। বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচার ও গুজবের জবাব যেমন দেওয়া হবে, তেমনই বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইও জোরদার করা হবে। বিরোধীরা যাতে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি।’

ঈদের পর আওয়ামী লীগের কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের চলমান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আগস্টে শোকের মাস অনুযায়ী কর্মসূচি থাকবে। সেপ্টেম্বর মাসের কর্মসূচি হবে নির্বাচনকেন্দ্রিক, তাতে নির্বাচনি কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত হবে। নির্বাচন কড়া নাড়ায় আগামী তিন মাসের কর্মসূচিই প্রকারান্তরে নির্বাচনি প্রচারে পরিণত হবে। তবে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি নির্ধারণ ও পালন করা হবে।’

জানা গেছে, জুলাই মাসে বিরোধীরা যে ধরনের কর্মসূচিতে যাবে, তার পাল্টা-কর্মসূচি দেবে আওয়ামী লীগ। এর সঙ্গে আরও কিছু কর্মসূচি দেওয়া হবে। রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় শহর থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এসব কর্মসূচি। তৃণমূল পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের কারণে মাঠ নিজেদের দখলে রাখার পাশাপাশি নেতাকর্মীরা চাঙা থাকবেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক কর্মসূচি বাড়ানোটাই স্বাভাবিক। জনগণের কাছে আমরা বার্তা দিতে চাই, আওয়ামী লীগের বিকল্প নাই। ঈদের পর তৃণমূল থেকে মহানগর পর্যন্ত কর্মসূচি বিস্তৃত করা হবে।’