দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে রাশিয়া ও বিএনপির বাকযুদ্ধের পরিণতি কী?

প্রকাশিত: ৫:৩৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪

ডেস্ক রিপোর্ট :

বিশ্বের ক্ষমতাধর দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দ্বন্দ্ব বর্তমানে দুনিয়াজোড়া কূটনীতি ও রাজনীতির মহলে পরিচিত এক বিষয়। নির্বাচনের আগে এ প্রসঙ্গে দুই বার যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছে। কিন্তু এবার এক ধাপ সরে এসে বিএনপির সঙ্গে সরাসরি বাকযুদ্ধে জড়িয়েছে রাশিয়া। গত ২৭ জানুয়ারি দলের একটি কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছিলেন, ‘ভারত, চীন আর রাশিয়া—তাদের সরকার হাসিনার সরকার; এটা বাংলাদেশের জনগণের সরকার নয়।’

ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে বিএনপির ওই বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি এ ধরনের বক্তব্য বিশ্বাস না করার আহ্বান জানিয়েছেন। গত বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে রুশ রাষ্ট্রদূত এ মন্তব্য করেন। কথা হচ্ছে, রুশ রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্য কতটা সমীচীন। তিনি চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে পারতেন কিনা।

একটি দল নির্দিষ্ট করে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্য প্রদান কূটনৈতিক শিষ্টাচার বিবেচনায় শোভন কিনা জানতে চাওয়া হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘পশ্চিমা দূতাবাসগুলো তো করছে আগে থেকেই। হিরো আলমের সময় সাত-আটটি দেশ মিলে বিবৃতিও দিয়েছিল। জাপানের আগের রাষ্ট্রদূতও তো সরাসরি কথা বলেছেন। তাকে (রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত) জিজ্ঞেস না করা হলে হয়তো বলতেন না। প্রশ্ন করা হয়েছে বলে বলেছেন। বিষয় হচ্ছে একই জিনিস কিন্তু কোনো দেশের নাম না উল্লেখ করে তারা (বিএনপি) বলতে পারত। অন্যরাও বলে, তারাও বলেছে। কোনোটাই ভাল না। কিন্তু আমরাও একটা দেশের নাম বলে ফেলি। সবসময় আমরা বলি, ভারতের নাম। ভারতের জন্য সরকার টিকে আছে। এসব বলাটাও অনুচিত আমি মনে করি। এমনভাবে সবাই বলা শুরু করেছে। রুশরা আগে হয়তো বলত না। ওরা হয়তো দেখছে, না বলে থাকলে ভুল বার্তা যাবে। সে হিসেবে তারাও হয়তো বলা শুরু করেছে।’

অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘বিএনপি যেহেতু একটা দেশের নাম ধরে বলেছে, রাশিয়া তো জবাব দেবেই, না জবাব দিলে মনে হবে যে এটাই সত্য।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান সমকালকে বলেন, ‘রাশিয়া কতকিছুই তো করতে পারে না, কিন্তু সবই করছে। বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ চীন, রাশিয়া ও ভারত যেভাবে হস্তক্ষেপ করল। যেভাবে তারা নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করল তাতে খুবই স্পষ্ট হলো, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের যে আত্মমর্যাদা থাকার কথা, সেটা না থাকার কারণে তো আমরা এরকম একটা অবস্থার শিকার হলাম।’

অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন বলছেন, ‘এর মধ্য দিয়ে আমাদের ঝুঁকিগুলো এবং বিপদগুলো স্পষ্ট হচ্ছে- যেমন নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কারা ভূমিকা পালন করছে, আমরা শেষ পর্যন্ত আমাদের সিদ্ধান্তগুলো স্বাধীনভাবে নিতে পারি কিনা, এ প্রশ্ন চলে আসে। আমরা তো দেখলাম সামগ্রিকভাবে শুধু রাশিয়া নয়, নির্বাচন ঘিরে চারটি দেশেরই ভূমিকা কী। এসবের ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটা তো কোনোভাবে কাম্য নয়।’

রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কির বক্তব্য আওয়ামীসুলভ বলে সর্বশেষ আজ শুক্রবার মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্ঞান ও অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক স্বার্থের ভিত্তিতে। বিএনপি বিশ্বাস করে, দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধনেই দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক সাফল্য নিহিত রয়েছে। তাই বিএনপি রাশিয়াকে আহ্বান জানায়, বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতার সংকল্প ও মহান আত্মত্যাগের প্রতি উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনের জন্য।’

চারটি দেশের নাম উল্লেখ করে বিএনপি যেভাবে দোষারোপের পাশাপাশি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের যে আহ্বান জানাচ্ছে, দেশগুলো তাতে কতটুকু সাড়া দেয় সেটি চিন্তার বিষয়। বিশেষত রাশিয়ার সঙ্গে বিএনপির এই মুখোমুখিতা কোথায় গিয়ে শেষ হয়, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।