চার দিন বিরতির পর আজ শুক্রবার ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। এ পর্বেও টঙ্গীর তুরাগতীরে সমবেত হয়েছেন লাখো মুসল্লি। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। এর আগে গত রোববার আখেরি মোনাজাতে শেষ হয় প্রথম পর্বের কার্যক্রম বা মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের ইজতেমা।
আজ বাদ ফজর ভারতের মাওলানা সেহজাদের আমবয়ানে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার কার্যক্রম। এ উপলক্ষে দুদিন আগে থেকে ইজতেমা ময়দানে সমবেত হতে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তাঁদের পদচারণে পুরো ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা মুখর হয়ে ওঠে। বেলা দেড়টার দিকে জুমার নামাজ আদায় করা হবে। নামাজে অংশ নিতে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে মুসল্লিরা আসছেন দলে দলে।
আজ সকালে গিয়ে দেখা যায়, ইজতেমায় অংশ নিতে আসা অধিকাংশ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করেছেন। তাঁরা জিকির-আসকার, রান্না, খাওয়া দাওয়া ও বয়ান শুনে সময় অতিবাহিত করছেন। দলে দলে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা। কেউ বাস, কেউ ট্রাক, কেউ পিকআপ থেকে নেমে মাঠের বিভিন্ন ফটক দিয়ে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করছেন। তাঁদের কারও মাথায়, কারও কাঁধে, কারও হাতে একাধিক ব্যাগ, পোঁটলা। মাঠে গিয়ে খুঁজে বের করছেন নিজেদের জন্য নির্ধারিত খিত্তা।
গত বুধবার থেকে বিচ্ছিন্নভাবে মাঠে প্রবেশ করতে শুরু করেন মুসল্লিরা। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত আসেন সবচেয়ে বেশি মুসল্লি।
ইজতেমা ময়দানের ভেতর কথা হলো মুন্সিগঞ্জের (৪৪ নম্বর খিত্তা) কয়েকজন মুসল্লির সঙ্গে। তাঁরা জানান, নামাজ, বয়ান, জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তাঁরা এসেছেন। আজ শুক্রবার ও কাল শনিবারও তাঁদের তাবলিগ জামাতের সাথিরা আসতে থাকবেন।
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা আয়োজকদের একজন মো. মুহিবুল্লাহ বলেন, ইতিমধ্যে বেশির ভাগ মুসল্লি চলে এসেছেন। বিদেশি মেহমানরাও আসছেন, আরও আসবেন। তিনি বলেন, ‘এখনো কিছু কিছু জায়গায় পানির কিছুটা সমস্যা রয়েছে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি, তাঁরা কাজ করছেন।’
এ ব্যাপারে জানতে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘পানির ব্যবস্থা আগেরটাই থাকবে। তবে মুসল্লিরা যাতে পানি সংকটে না পড়েন, সে জন্য আগে থেকেই পানি মজুত রাখা হবে। আশা করছি, তাঁরা কোনো সমস্যায় পড়বেন না।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ইজতেমার প্রথম পর্ব থেকেই মুসল্লিদের নিরাপত্তায় কাজ করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ, সাদাপোশাকের পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) আনসার সদস্যরা। এর বাইরে পুরো ইজতেমা ময়দানকে সাড়ে ৪০০ ক্লোজড সার্কিট (সিসি) টিভির আওতায় আনা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
মুসল্লিদের ব্যবহারের জন্য রয়েছে ৩১টি ভবনে আট হাজার ৩৩১টি শৌচাগার। ১৭টি গভীর নলকূপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনটি গ্রিড থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। চারটি শক্তিশালী জেনারেটর প্রস্তুত রাখা রয়েছে। মুসল্লিদের পারাপারের জন্য সেনাবাহিনীর সাতটি ভাসমান সেতু প্রস্তুত রয়েছে। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১০টি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ছয় স্তরে কাজ করবেন পুলিশের প্রায় আট হাজার সদস্য।
ইজতেমার পথে দুই মুসল্লির মৃত্যু
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় যোগ দিতে এসে গত বুধবার রাতে পৃথক স্থানে ট্রেন ও কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
নিহত দুজনের একজন মো. গোলদার হোসেন (৪০)। তাঁর বাড়ি গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানায়। তিনি বুধবার রাত ৯টার দিকে টঙ্গী রেলস্টেশনে একটি ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আহত হন। পরে হাসপাতালে মারা যান।
নিহত অপরজন হলেন মো. সুরুজ মিয়া (৫৭)। তাঁর বাড়ি নরসিংদী জেলার বেলাব থানায়। তিনি টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে একটি কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় মারা যান।
দুজনই ইজতেমায় যোগ দিতে আসছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের (গোয়েন্দা বিভাগ-ডিবি) উপ পুলিশ কমিশনার মনজুর রহমান।