নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে দক্ষিণাঞ্চল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদ উঠলেও তাতে শীতের তীব্রতা কমাতে পারছে না। কয়েকদিনের ঠান্ডা আবহাওয়ায় বরিশাল বিভাগে দিনে দিনে বাড়ছে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগ। রোগী বাড়লেও চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিভাগের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল। হাসপাতাল প্রশাসন বলছে, গত এক সপ্তাহে ধারণক্ষমতার ৭ গুণের বেশি রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে ২৭৩ জন ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া নিয়ে ৫৪ জন, ডায়রিয়ায় ১১৮ জন এবং ঠান্ডাজনিত অন্যান্য রোগে ১০১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
জানা গেছে, উপকূলীয় ভোলা ও পটুয়াখালীতে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রার্দুভাব বেশি। শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় পটুয়াখালীতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ জন, ভোলায় ২৪, বরিশালে ৩, পিরোজপুরে ৮, বরগুনায় ৪ ও ঝালকাঠিতে ২ জন। ডায়রিয়ায় ভোলায় ৪৮, পটুয়াখালীতে ২৩, পিরোজপুরে ১২, বরিশালে ১৭, বরগুনায় ৭, ঝালকাঠিতে ১১ জন। ঠান্ডাজনিত অন্যান্য রোগে সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয়েছেন পটুয়াখালীতে ৬১ জন। এ ছাড়া ঝালকাঠিতে ৩১, বরিশালে ৪ জন।
এ ছাড়া জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহির্বিভাগে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিশু ও বয়স্ক রোগীর চাপ বহুলাংশে বেড়েছে। এর অধিকাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হলেও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে নিজ বাসায় ফিরছেন।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জানিয়েছে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ড রোগীতে পরিপূর্ণ। বর্তমানে ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি রোগী ভর্তি আছে।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান উত্তম কুমার সাহা জানান, দুই ও তিন তলা ছাড়াও আরও কয়েকটি ইউনিট নিয়ে শিশু বিভাগ। রোগী নিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া রোগী, সংকটাপন্ন রোগী রয়েছে। বিভাগের একমাত্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হওয়ায় আশপাশের জেলা ও উপজেলা ছাড়াও বিভাগের বাইরে থেকেও প্রতিদিন এখানে শত শত রোগী আসে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, শীতকাল হওয়ায় এই মুহূর্তে নিউমোনিয়া, জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগ নিয়ে শিশু ও বয়স্ক রোগী ভর্তি হচ্ছেন বেশি। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে। বিভাগের বড় হাসপাতাল হলেও এর শয্যা সংখ্যা কম। ধারণক্ষমতার প্রায় ৭ গুণ বেশি রোগীর সেবা দিতে বাধ্য হচ্ছি। নতুন ভবন তৈরি হয়ে গেলে আমাদের এ সমস্যা কেটে যাবে।
পরিচালক জানান, শিশু ওয়ার্ডে বেড বরাদ্দ আছে ৬৩টি। কিন্তু শিশু ওয়ার্ডসহ শিশু বিভাগের অধীনে ভর্তি আছে প্রায় ৩০০। সংকটাপন্ন ১৩১ শিশু আছে স্পেশাল কেয়ার নিওনেটাল ইউনিটে। আক্রান্তদের মধ্যে শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের সংখ্যাই বেশি। শুধু ডায়রিয়া ওয়ার্ডেই শিশুর সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে দক্ষিণাঞ্চলে। এর ফলে গত এক সপ্তাহ ধরেই জেঁকে বসেছে শীত আর শ্রমজীবী মানুষ পড়েছে বিপাকে। আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ বশির আহমেদ বলেন, সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি ছিল বরিশালে। তবে আজ মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ৪ ও সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিরাজ করছে। আবহাওয়ার পর্যালোচনায় দেখা গেছে ১৮ জানুয়ারি খুলনা ও বরিশালে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরেই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে।