আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের নতুন সরকার গঠনের জন্য যতগুলো আসন দরকার, তার চেয়ে কম থাকলেও নতুন সরকার গঠন করতে জোট সঙ্গীদের সমর্থন পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি। এর ফলে টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএর সব দলের পক্ষ থেকে তাদের সমর্থন নিশ্চিত হয়েছে বলে দলটি ঘোষণা দিয়েছে।
দলটির এক্স অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক বিবৃতি বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদিকেই সর্বসম্মতিক্রমে জোটের নেতা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা ২১ নেতার মধ্যে রয়েছে তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) নেতা এন চন্দ্রবাবু নাইডু এবং জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) এক প্রতিনিধির নাম।
লোকসভায় কাঙ্ক্ষিত ২৭২ আসন নিশ্চিত করতে এই দুটি দলের সমর্থন বিজেপির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে, সরকার গঠন করতে শরিকদের পাশে পাওয়ার ব্যাপারে বিজেপির আত্মবিশ্বাসে আর কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভারতের দরিদ্র, নির্যাতিত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষ এবং নারী, যুবক ও কৃষকদের সেবায় শ্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এর আগে, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এক সভায় অংশ নেন জোট নেতারা। সেখানে তাদের বেশ নির্ভার দেখা যায়। কেউ কেউ তার সাথে হাসিতেও মেতে ওঠেন।
‘কিংমেকার’
টিডিপি এবং জেডিইউ উভয় দলই কংগ্রেসের সাবেক মিত্র। নির্বাচনের মাস কয়েক আগে তারা মি. মোদির জোটে যোগ দেয়।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) প্রধান নীতীশ কুমার একটা সময়ে বিজেপির জোট সঙ্গী থাকলেও তিনি কয়েক বছর আগে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন এবং বিজেপি-বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে ‘ইনডিয়া’ জোট গঠনের অন্যতম কারিগরও ছিলেন তিনি।
তবে এবছরের জানুয়ারিতে আবারও জোট বদল করে এনডিএ-তে যোগ দেন তিনি। বিহারে এখন এনডিএ জোটেরর সঙ্গে সরকার চালাচ্ছেন নীতিশ এবং লোকসভা নির্বাচনেও এই জোটে শামিল ছিল তার দল।
জেডিইউ বিহারে ১২ টি আসন জিতেছে, এতটা তারা প্রত্যাশা করেননি। আবার বিজেপিও সে রাজ্যে ১২টি আসন পেয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি বা টিডিপি পেয়েছে ১৬টি আসন। নীতীশ কুমারের মতো চন্দ্রবাবু নাইডুও কিছুদিন আগে পর্যন্ত মোদি সরকারবিরোধী অবস্থানে ছিলেন।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বের হওয়ার পরে এই দুই নেতাই এখন হয়ে উঠেছেন ‘কিংমেকার’। আঞ্চলিক দলগুলোর পক্ষে চমক দেখানো অসম্ভব কিছু নয়। তবে, আপাতত জোটের মধ্যে সব ঠিক আছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
পরের ধাপ কী?
যেহেতু জোটসঙ্গীদের সমর্থন নিশ্চিত হয়ে গেছে, শিগগিরই নরেন্দ্র মোদি প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই সাক্ষাতে সরকার গঠনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সমর্থনের কথা ব্যক্ত করবেন তিনি।
এনডিটিভিসহ স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, তিনি শনিবারে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন। যদিও এ ব্যাপারে এখনও কোন আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানা যায়নি।
অন্যদিকে, সরকার গঠনের জন্য কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক আসন না পেলেও বিরোধীরা এখনো হাল ছাড়েনি। তবে, এই পর্যায়ে এসে ঘটনার মোড় ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
জোট সামলানোর চ্যালেঞ্জ
এর আগে একাধিকবার রাজ্য ও কেন্দ্রে সরকার গঠন করেছেন নরেন্দ্র মোদি। তবে, কোনোবারই আসনের সংখ্যার বিচারে সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করতে অন্য কারো ওপর নির্ভর করতে হয়নি।
গত ১০ বছরেও কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনায় ক্ষমতার ব্যবহার পুরোটাই তার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাতেই থেকেছে, অন্য কেউ ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন না।
কিন্তু এখন জোট সরকার হলে সেখানে অন্যরাও অংশগ্রহণ করবে, তাদের কথাও শুনতে হবে। সেই জোট সঙ্গীদের পক্ষ বদলের প্রবণতা আবার সর্বজন বিদিত।
প্রবীণ সাংবাদিক সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বিবিসিকে বলছেন, ‘নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর ক্রাচ ছাড়া এই সরকার চলতে পারবে না এবং নীতীশ কুমার হাওয়ার দিক বদলের মতো জোট বদলে অভ্যস্ত।’
তার কথায়, ‘নরেন্দ্র মোদির এই মডেলে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। গত তিন দশকে তিনি তিনবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এবং দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে একরকম একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে কাজ করেছেন।’
‘এখন হঠাৎ করে সমন্বয় করে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাজনীতি করা তার কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এই নতুন কাজের ধরন তিনি কতটা গ্রহণ করতে পারবেন, তার ওপরেই এই সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভর করছে।’