নরওয়ের নাগরিকদের হেনস্তা, একজনকে মারধর

প্রকাশিত: ১:০০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৯, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নরওয়ের চারজন এবং বাংলাদেশের এক নাগরিককে হেনস্তা করা হয়েছে। এর মধ্যে নরওয়ের একজনকে মারধর করে রক্তাক্ত করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে বিমানবন্দরের আগমনী ক্যানপি-২ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে হজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি ভিডিও স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল রাতে ছড়িয়ে পড়া এ ভিডিওতে দেখা যায় একজন নারীকে কাঁদতে। এসময় একটি ছেলেকে জড়িয়ে কান্নারত অবস্থায় তিনি বলছিলেন, “কি করছে, কি করছে রে।” ভিডিওতে ছেলের মুখ ফোলা ও বাম চোখে রক্ত জমাট বাধা দেখা যায়।

ভিডিওতে নারীটি তার ছেলেকে মারধরের অভিযোগ তোলেন বিমানবন্দরে কর্তব্যরত বিমান বাহিনী, এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক) ও আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে।

ওই নারী অভিযোগ করেন, অতর্কিতভাবে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা তার ছেলেকে মারধর করেছেন।

এদিকে বিমানবন্দরসূত্র অনুযায়ী জানা গেছে, এসময় দেশে আগত ২ জন যাত্রীর সঙ্গে একজন বিমানবাহিনীর সদস্যের তর্ক হয়। একপর্যায়ে যাত্রী ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

এ ঘটনায় এক যাত্রী ও বিমানবন্দরের একজন নিরাপত্তা সদস্য আহত হয়েছেন। পুরো ঘটনা জানাজানির আগেই গোটা নেট দুনিয়ায় মারধরের বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং প্রাথমিক তদন্ততে জানা যায়, বাংলাদেশে আসা ৫ জন যাত্রীর একটি দল বিমানবন্দরের সব কার্যক্রম শেষ করে লাগেজ নিয়ে কেনপি ২ এলাকা দিয়ে বের হচ্ছিলেন। এসময় ১ জন যাত্রী ট্রলি সহ কেনপি ২ এর গেট এর ঠিক সম্মুখভাগে দাঁড়িয়ে থেকে অন্য যাত্রীদের চলাফেরায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছিল।

বিমানবন্দরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর একটি সূত্র জানায়, মারধরের শিকার যাত্রীর নাম মোহাম্মদ সাইদ উদ্দিন। অন্য চারজন হলেন সাইদের বাবা গিয়াস উদ্দিন, মা বেগম মনোয়ারা, ভাই মোহাম্মদ মহি উদ্দিন এবং গিয়াস উদ্দিনের পুত্রবধূ ইপসা জান্নাতুল নাঈম। এই পাঁচজনকেই হেনস্তা করা হয়েছে।

বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, এই পাঁচ যাত্রী নরওয়ে থেকে কাতারের দোহা হয়ে কাতার এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে (কিউআর-৬৩৮) ঢাকায় এসেছেন। তাদের গ্রামের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী।

ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, যাত্রীরা বের হওয়ার সময় কিউআরএফ সদস্যরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পরে এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে দলগতভাবে আক্রমণ করে সাইদ উদ্দিনকে রক্তাক্ত করা হয়।

এ ঘটনার বিষয়ে এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক সিহাব কায়সার খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘দুই ছেলে, বাবা, মা, এক ভাইয়ের স্ত্রীসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য নরওয়ে থেকে ঢাকায় আসেন।

কোনো একটি স্থান থেকে তাদের সরে যেতে বলা নিয়ে তর্ক শুরু হলে এরপর এ ঘটনার সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি। পরে এক ছেলে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেলে আমরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’

এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, একই সময় বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের চাপ ছিল। সেসময় একজন নিরাপত্তাকর্মী ওই যাত্রীকে ট্রলিসহ কিছুটা সরে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করলে তিনি তাতে কর্ণপাত না করে দাঁড়িয়ে থাকেন।

কিছুক্ষণ পরে সেই নিরাপত্তাকর্মী পুনরায় ওই যাত্রীকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে গেলে তিনি প্রচণ্ড রাগান্বিত হয়ে পড়েন, এরপর এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।