নাশকতার জন্য অস্ত্র-গ্রেনেড মজুদ করা হয় পাহাড়ের আস্তানায়ঃ আরসার দুই কমান্ডারের স্বীকারোক্তি

প্রকাশিত: ৫:০৭ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি,কক্সবাজারঃ 

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতার লক্ষে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার মজুদ করা বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার। এ সময় এ সংগঠনের শীর্ষ দুই কমান্ডারকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, নাশকতার জন্য এ সব অস্ত্র পাহাড়ের আস্তানায় মজুদ করা হয়েছিল।

আজ বুধবার ভোরে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২০ এর লাগোয়া লাল পাহাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার আরসা কমান্ডাররা হলেন, উখিয়ার ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম ও ক্যাম্প ৮ ডব্লিউর রিয়াজ। তাদের কাছ থেকে ৫টি গ্রেনেড, ৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি ককটেল, একটি বিদেশি রিভলবার, ৯ রাউন্ড নাইনএমএম পিস্তলের অ্যামুনিশন, একটি এলজি এবং ৩টি ১২ বোর কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশনায় সেনাবাহিনীর বোম ডিস্পোজাল টিম উদ্ধার করা গ্রেনেড, হাত বোমা নিষ্কৃয় করেছে।

এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৫ এর আভিযানিক দল আজ ভোরে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন লাল পাহাড়ে আরসার আস্তানায় অভিযান চালায়। অভিযানে আরসার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ও কমান্ডার মো. শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম’সহ দুজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম ২০১৭ সালে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ এবং ক্যাম্প-১৫ এ বসবাস শুরু করে। মিয়ানমার থাকাকালীন সেখানকার জোন কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এ সময় আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবেও দুই মাস দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে ২০১৭ সালে আসার পর মৌলভী আকিজের মাধ্যমে আরসায় পুনরায় যোগ দেন। আরসার হয়ে আধিপত্য বিস্তার কোন্দলসহ খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন তিনি। অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন বিস্ফোরকের ওপর পারদর্শী হওয়ায় তাকে ক্যাম্প-১৫ এর কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পে আরসার নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে পড়ায় তিনি আরসার প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব নেন। পার্শ্ববর্তী দেশে সৃষ্ট সংঘর্ষের ফলে লুটকৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে ৩টি হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

আর রিয়াজও ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং বসবাস শুরু করে। ২০১৮ সালে মৌলভী ইব্রাহিমের মাধ্যমে আরসায় যোগ দেন এবং প্রাথমিকভাবে পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ আরসা বিরোধী সংগঠনের সদস্যদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতেন। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি মিয়ানমার ফিরে গিয়ে ৬ মাসের সামরিক বিভিন্ন বিষয়াদিসহ মাইন, বোমা, হাত বোমা ও বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। সম্প্রতি আবার বাংলাদেশে ঢুকে মাস্টার সলিমের অন্যতম সহযোগী হয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। তার বিরুদ্ধে ১টি হত্যা মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।