নিজদেশে ফিরতে ঈদের নামাজ শেষে বিশেষ দোয়া করলেন রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ৫:১২ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২৩

কক্সবাজার প্রতিনিধি:
নিজদেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে ঈদুল আজহার নামাজ শেষে বিশেষ দোয়া করেছেন উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। এসময় নিজ দেশের মাটিতে দাফন করা স্বজন ও ২০১৭ সালের নিপীড়নে নিহতদের স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন মোনাজাতরত রোহিঙ্গারা। নামাজ আদায়ের পর রোহিঙ্গারা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। এরপর গরু জবাইয়ে যোগ দিয়ে ভাগ-বণ্টন করেন আশ্রিতরা। আজ বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা হতে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী ক্যাম্পে ছোট-বড় মসজিদে পবিত্র ঈদুল আজাহার নামাজ আদায় করেছেন রোহিঙ্গারা।

ঈদের দিন সকাল থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কিছু অংশে বেলুন আর ঈদ মোবারক লেখা ব্যানারে গেট দিয়ে রং-বেরঙে সাজানো হয়েছে। এসব ক্যাম্পে কিশোর-কিশোরী ও শিশুরা সকাল থেকেই সেজেগুজে, নতুন জামা-কাপড় পরে রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে মেতে ওঠে। অনেক যুবক ও বয়স্করাও নতুন জামা, গেঞ্জি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি ও চশমা পরে দলবেঁধে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করছেন। আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

শালবাগান ক্যাম্পর রোহিঙ্গা নেতা বদরুল ইসলাম বলেন, শরণার্থী জীবন কঠিন। নিজ দেশে থাকতে আমরা গরু কোরবানি দিতে পেরেছি। শরণার্থী হয়ে আসার পর আমরা সেই আগের মতো কোরবানি করতে পারি না। গত বছর কোরবানি ঈদে ২৬-২৭ নম্বর ক্যাম্পে দাতাসংস্থার পক্ষ থেকে কোরবানির সময় গরু দিলেও এবার কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে আমরা গরু বা ছাগল পাইনি। দিন দিন দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে খাদ্যসহায়তা কমিয়ে ফেলেছে। আমরা আর শরণার্থী হয়ে থাকতে চাই না, আমরা মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরতে চাই। ঈদুল আজহার নামাজ শেষে ক্যাম্পে বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে সে দোয়া কামনা করা হয়েছে।


টেকনাফ চাকমারকুল ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা আজিজুল হক বলেন, শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেওয়ার পর অন্যান্য বছরের মতো এবারও ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। ঈদের নামাজ শেষে দোয়ায় মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে যেন স্বদেশ ফেরত যেতে পারি সেই কামনা করেছি।

মিয়ানমার আমাদের নিজ দেশ হওয়ার পরও আমরা শরণার্থী শিবিরের ঈদ উৎযাপন করলাম এর চাইতে কষ্টকর ও বেদনাদায়ক আর কিছু হতে পারে না।
উখিয়ার শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা ডা. জুবায়ের বলেন, আমরা মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে প্রতি বছর ঈদ উৎযাপন করতাম। একে-অপরের বাড়িতে যেতাম, নিজেরা কোরবানির গরু কিনে তা জবাই করে গরিব অসহায়সহ স্বজনদের কাছে মাংস-রুটি পাঠাতাম। আজ শরণার্থী হয়ে অন্যদের সাহায্য নিয়ে আমরা কোরবানি ঈদ উৎযাপন করলাম। শরণার্থী জীবন আমাদের আর ভালো লাগে না। আমাদের ছেলেমেয়েদের মাঝে ঈদে আনন্দ দেখা দিলেও আমরা দুঃখ নিয়ে ঈদ কাটাচ্ছি। এ সময় তিনি বিশ্বনেতাসহ মিয়ানমার সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নাগরিকত্ব, নিজের বসবাসের বাড়িঘর ও জমি, সম্পত্তি ফেরত, জীবিকা ও চলাচলের অধিকার, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দ্রুত সময়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজ দেশ মিয়ানমারের ফেরার সুযোগ দিন। স্বদেশের ফেরার আকুতি কবুলে ঈদের নামাজ শেষে বিশেষ দোয়া কামনা করা হয়।

 

১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ জামাল পাশা বলেন, টেকনাফ শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদ উদযাপন করেছে। সকাল থেকে ক্যাম্পের ভেতর রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরী যুবক ও বয়স্করা নতুন কাপড় পরে বেড়াচ্ছেন। গরু জবাই করে ভাগ-বণ্টন করে যার যার ঘরে সেগুলো নিয়ে যান। ঈদ উপলক্ষে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও।

৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদের নামাজ সম্পন্ন হয়েছে। ক্যাম্পে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।
উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে সাড়ে ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অবস্থান করছেন। ২০১৮ সালে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে এ পর্যন্ত বাছাই করেছে মিয়ানমার। কিন্তু এখনো কোনো রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সরকার ফেরত নেয়নি। পরবর্তীসময় মিয়ানমার সরকারের নানা কৌশলে তারা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এড়িয়ে গেলেও বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতা ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপ অব্যাহত রেখেছে।