ফেনী প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত মীর মোজাম্মেল হোসাইন নাঈমের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। রোববার (২৪ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুর ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে দাদা-দাদির কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নাঈমের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে চারপাশ ভারি হয়ে ওঠে। আদরের সন্তানকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মৃতের মা-বাবা।
নাঈম ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায় বসবাসরত সাউথ ইস্ট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মীর মোতাহার হোসেন শাহীনের ছেলে। তাদের গ্রামে বাড়ি সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুর ভূঞা বাড়ি। নাঈম ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি ২০১৯ সালে ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন।নাঈমের বাবা মোতাহার হোসেন শাহীন বলেন, আমার ছেলে অত্যন্ত নম্র-ভদ্র, বিনয়ী ও মেধাবী ছিলেন। দেশবাসীর কাছে ছেলের জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে শহীদি মর্যাদা দান করেন। পরিবার যেন এ শোক কাটিয়ে উঠতে পারে সেজন্য সকলের দোয়া চাই।নিহতের চাচা মাওলানা মুফতি মোফাচ্ছের হোসেন মামুন বলেন, ফুলের সুগন্ধি ছড়ানোর আগেই ঝরে গেল। তাকে হারিয়ে শোক সইবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। আমার ভাই-ভাবির স্বপ্ন ছিল তাকে দেশের সেরা প্রকৌশলী করা। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন স্বপ্নই রয়ে গেল। নাঈমের মৃত্যুর জন্য পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ দায়ী। তাদের অবহেলার কারণে এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
আব্দুল্লাহ নামে তার এক সহপাঠী বলেন, বন্ধুদের মধ্যে নাঈম কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল। সে সহজে সবার সঙ্গে মিশতে পারতো। এ ঘটনায় জড়িতদের তদন্তের মাধ্যমে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
জানাজার আগে নাঈমের মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জানিয়ে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ফেনী জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঞা, একেএম শামসুদ্দিন, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুফতি আবদুল হান্নান, শর্শদি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
এর আগে গতকাল (শনিবার) সকালে গাজীপুর মহানগরের বোর্ড বাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রায় ৪৬০ জন শিক্ষার্থী বিআরটিসির ৬টি ডাবল ডেকার বাস ও তিনটি মাইক্রোবাসে করে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে যাচ্ছিলেন।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো আঞ্চলিক সড়ক ধরে রিসোর্টের দিকে যাওয়ার সময় উত্তর পেলাইদ গ্রামের উদয়খালী বাজারে পৌঁছালে বিআরটিসির একটি ডাবল ডেকার বাস পল্লী বিদ্যুতের তারের সঙ্গে লেগে যায়। এতে বাসটি বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।