জেলা প্রতিনিধি,ফরিদপুরঃ
ফরিদপুর সদরের গেরদা ইউনিয়নের বাখুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বুধবার সকাল ১০টা। কেন্দ্রের বাইরে ভোটারের কোনো লাইন নেই। কয়েক মিনিট পরপর দু-একজন ঢুকছেন। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমাট বৃষ্টির পানি। পানির মধ্যে ইট বিছিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বেশ কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে ফরিদপুরের বেশ কিছু ভোটকেন্দ্রের সামনে পানি জমে যায়। এ ছাড়া মেঘলা আবহাওয়ার কারণে প্রথম দুই ঘণ্টায় প্রায় সব কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের উপস্থিতি কিছুটা বাড়তে থাকে। তবে অধিকাংশ কেন্দ্রে দীর্ঘ কোনো লাইন ছিল না। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো ধরনের সহিংস ঘটনাও ঘটেনি। দিনভর নিরুত্তাপ পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলতে থাকে। বিকেল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষে শুরু হয় গণনা।
এর পর ধীরে ধীরে চেয়ারম্যান পদে ভোটের ফল আসতে থাকে। এতে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস মেলে। চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে ক্ষণে ক্ষণে দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। কখনও এগিয়ে ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক টেলিফোন প্রতীকের মনিরুল হাসান মিঠু; আবার কোনো সময় তাঁকে পেছনে ফেলেন কোতোয়ালি আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনারস প্রতীকের সামচুল আলম চৌধুরী। মিঠু ও সামচুলের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস রাখার মতো অবস্থায় ভোটের ফল নিয়ে এগিয়ে যান মোটরসাইকেল প্রতীকের ফকির মো. বেলায়েত হোসেনও। ত্রিমুখী লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত অল্প ভোটে জিতলেন অর্থ পাচার মামলায় নির্বাচনের এক দিন আগে কারাগারে যাওয়া সামচুল। রাত সাড়ে ৯টায় বেসরকারিভাবে সামচুলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনি পেয়েছেন ৩২ হাজার ৩১৮ ভোট। আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হাসান মিঠু পেয়েছেন ২৯ হাজার ৩৩ ভোট। তৃতীয় হয়েছেন বেলায়েত হোসেন। তিনি পেয়েছেন ২২ হাজার ৫৪০ ভোট। হেলিকপ্টার প্রতীকের বিএনপির সাবেক নেতা রউফ উন নবী পেয়েছেন ১৫ হাজার ১৩৪ ভোট। ফরিদপুর সদরের ১৫৪ কেন্দ্রের মোট ভোটার হলেন ৪ লাখ ৮ হাজার ৬৬০। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৩০৫। ভোটের হার ২৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
ফরিদপুর সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়েছেন ৬ জন। মিঠু ও বেলায়েত ফরিদপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য এ. কে. আজাদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। আর ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন সামচুল।এদিকে, নির্বাচন ঘিরে ফরিদপুরজুড়ে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা। মোতায়েন ছিল স্ট্রাইকিং ফোর্স। নির্বাচন এলাকায় পুলিশ-র্যা ব সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। গতকাল সকালে আলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুল হাসান মিঠু ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির। এ ছাড়া ফকির মো. বেলায়েত ভোট দিয়েছেন কানাইপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা নির্বিঘ্নে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। কোনো প্রার্থী অনিয়মের অভিযোগ তোলেননি।
বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে ভোট দিতে আসা নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা হয়। তাদের মধ্যে মহিম স্কুল কেন্দ্রে সূর্য বেগম নামে এক অশীতিপর বৃদ্ধা বলেন, এক কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে ভোট দিতে এসেছি। টুকটুক করে হেঁটেছি। পথে কয়েকবার বিশ্রাম নিয়েছি। গ্রামের দশজন গণমান্য মানুষ আমার বিপদের দিনে পাশে থাকে। যারা বিপদে পাশে দাঁড়ায়, তাদের ভোট দিলাম।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনো ধরনের কারচুপি বা জালিয়াতির ঘটনা ঘটেনি। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত ছিল। তবে আগে থেকে বড় ধরনের কোনো শঙ্কাও ছিল না।
এদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪০ হাজার ২৭৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন চশমা প্রতীকের ইমান আলী মোল্লা। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উড়োজাহাজ প্রতীকের মনিরুজ্জামান মনির পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৪০৯ ভোট। এ ছাড়াও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফুটবল প্রতীকের মাসুদা বেগম ৫৩ হাজার ১৪০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কলস প্রতীকের রুখশানা আহমেদ পেয়েছেন ৫০ হাজার ৫৯৪ ভোট।
এ ছাড়া মধুখালী উপজেলায় দোয়াত-কলম প্রতীকের মুরাদুজ্জামান ২৯ হাজার ৪৭৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া প্রতীকের আহসানুজ্জামান পেয়েছেন ১৮ হাজার ৪৮৫ ভোট। এ ছাড়া চরভদ্রাসন উপজেলায় আনারস প্রতীকের আনোয়ার আলী মোল্লা ১৬ হাজার ১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় হয়েছেন টেলিফোন প্রতীকের নিজাম উদ্দিন। তিনি পেয়েছেন ১০ হাজার ৪৫৪ ভোট।