নির্বাচন ঘিরে সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে আগ্নেয়াস্ত্র
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
এসএম দেলোয়ার হোসেন:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকী। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর টানা অবরোধ ও হরতালে যানবাহনে জ্বালাও পোড়াও নাশকতা ও সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। এই সুযোগে নির্বাচন সামনে রেখে সারাদেশে রাজনৈতিক ক্যাডার নামধারী অস্ত্রধারী ও ভাড়াটে অপরাধীরা হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অস্ত্রের ও গোলাবরুদ্ধে মজুদ করতে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা আইন প্রয়োগকারীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কমপক্ষে ২০টি সামীন্ত পথ দিয়ে ভারী ও ক্ষুদ্র অস্ত্র এবং গোলবারুদ্ধ আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীর সমর্থকরাও প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মহড়া দিচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সহিংসতা রোধে দেশব্যাপী অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা বøক রেইড, কম্বাইন্ড ও চিরুনী অভিযান চালাচ্ছে। এরইমধ্যে পাবর্ত্য চট্রগ্রাম গহিন পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, সন্ত্রাসী একটি গোষ্ঠীর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ভান্ডার রয়েছে। নির্বাচনের আগে অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান আরও জোরদার না হলে একে ঘিরে দেশে সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হবে।
পুলিশ সদরদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেছেন, গত ৯ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই অভিযান আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিলেও নির্বাচনের আগে ও পরে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে সারাদেশে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনী। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেয়ে এবার মিয়ানমার থেকে অবৈধ অস্ত্রের যোগান বেশি দেওয়া হতে পারে। সে আশঙ্কা ও গোপন তথ্যেও ভিত্তিতে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ সীমান্তের কিছু এলাকায় নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।
বিজিবি সদর দপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বিজিবি সারাদেশের সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ১০৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫টি মর্টার শেল উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে ৪৪টি পিস্তল ও ২টি রিভলবার, ১টি এসএমজি, ২টি রাইফেল। বন্দুকসহ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে আরও ৫৬টি। গুলি ৭৯৯টি, সকল প্রকার বোম্ব ৩১টি, পিস্তল ট্রিগার ১০০টি, ম্যাগজিন ৪৫টি, গান পাউডার ৭.৫ কেজি, ৭টি বিস্ফোরক, ১৪টি ককটেল, ১৯৫ কেজি সালফার, ৪টি ডেটোনেটর ফিউজটি।
বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম নিউজ পোস্টকে বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনোমতেই অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য বিজিবি মহাপরিচালক দেশের প্রতিটি জেলার বিজিবি ব্যাটালিয়নকে নিরাপত্তা জোরদার ও সীমান্ত এলাকায় টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তে সিএনজি অটোরিকশা তল্লাশি চালিয়ে ৭টি বিদেশি অস্ত্র, ১৩টি ম্যাগজিন, ২৯৩ রাউন্ড গুলি ও ৩৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ এক নারীকে গ্রেফতার করেছে বিজিবি। এর নেতৃত্ব দেন বিজিবির রহনপুর ব্যাটালিয়ন (৫৯ বিজিবি) এর অধিনায়ক মেজর এস. এম. ইমরুল কায়েস। এছাড়া একইদিন রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার চকপাড়ায় ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে শূন্যলাইনে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের মুহুর্তে বিজিবির বিওপি টহল দল তাদের চ্যালেঞ্জ করে। এসময় তারা বস্তা ফেলে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। পরে ওই বস্তা তল্লাশি করে ৬টি বিদেশি পিস্তল, ১২টি ম্যাগজিন, ২৩৬ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ও ৫১ রাউন্ড মেশিনগানের গুলি উদ্ধার করে। এর নেতৃত্ব দেন রহনপুর ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া।
বিজিবি জানায়, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের অংশে ৩ হাজার কিলোমিটারের মতো কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হলেও বাংলাদেশ অংশে তা নেই। বাকি সীমান্ত অরক্ষিত।
বিজিবি সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (জিএস শাখা) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এম এম খায়রুল কবির নিউজ পোস্টকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার বড় একটি উপকরণ হলো সীমান্তে দিয়ে দেশে অস্ত্র ঢোকা। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমান্ত। এই সীমান্তের প্রতি ইঞ্চিতে পাহারা বসানো সম্ভব নয়। তবে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা সীমান্তে আভিযানিক কার্যক্রম, টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়িয়েছি। উত্তরবঙ্গের রহনপুর সোনামসজিদ, চুয়াডাঙ্গা, মহেশপুর, কুষ্টিয়া সীমান্ত স্পর্শকাতর বিবেচনায় নিয়ে নজরদারি বেশি বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, বিজিবি মূলত সীমান্ত থেকে দেশের ভেতরের ৮ কিলোমিটার এলাকার ভেতরে অভিযান চালায়। চোরাচালানিরা যদি কোনোভাবে সীমান্ত দিয়ে দেশের ভেতরে অস্ত্র নিয়ে ঢুকে যায়। সেক্ষেত্রে পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে সমন্বয় করে বিজিবি। যাতে তারা অস্ত্রের চালান আটকাতে পারে।
র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশ থেকে র্যাব ৬৪২টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর সঙ্গে জড়িত ৩২০জনকে গ্রেপ্তার করেছে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিট ৭৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে ১৯টি বিদেশি পিস্তল রয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ৪২টি মামলায় ৭১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২২ সালে উদ্ধার হয়েছিল মোট ৫ হাজার ৮৭৯টি।
পুলিশ জানায়, সম্প্রতি রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে অস্ত্র মজুত করছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে অবৈধ অস্ত্র আসছে। তাতে করে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অতীতেও সেটা দেখা গেছে। এছাড়া তারা নির্বাচন বানচাল করতে ইতোমধ্যেই ট্রেনে নাশকতা চালিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে।
গত ১৩ ডিসেম্বর ভোররাতে কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগড়ের পাহাড়ে ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় অভিযান চালিয়ে একটি অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পায় র্যাব-১৫ এর একটি টিম। এ সময় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। অভিযানের টের পেয়ে কারখানাটির মালিক ও অস্ত্র তৈরির প্রধান কারিগর মনিউল হক পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে র্যাব-১৫ অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন নিউজ পোস্টকে বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে কারাখানা গড়ে তুলে অবৈধ অস্ত্র তৈরি করে বিভিন্ন অপরাধীর কাছে বিক্রি করে আসছিল। এলাকাটি দুর্গম পাহাড়ি হওয়ায় তাদের অপকর্ম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির বাইরে ছিল। তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে পূণরায় পাহাড়ের আস্তানায় আত্মগোপনে চলে যেতো। এটি তাদের বংশ পরম্পরা ব্যবসা। আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি, যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের বাবা-চাচারাও এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। চক্রটি গহিন পাহাড়ে অবস্থান করে অস্ত্র তৈরি ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা পরিচালনাসহ ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল।
গত ৭ অক্টোবর রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী থানার কাপাশিয়া পাহাড়পুরে অস্ত্রেও বড় একটি চালানসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ ঘটনায় র্যাব-৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার সেদিন সাংবাদিকদের জানান, সা¤প্রতিক সময়ে উত্তরবঙ্গে জব্দ করা সবচেয়ে বড় অবৈধ অস্ত্রের চালান এটি। আটক ব্যক্তিরা চিহ্নিত অস্ত্র ব্যবসায়ী। ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তারকৃতরা অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করে দেশে অস্ত্র সরবরাহ করতো।
বিজিবি সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের অংশে ৩ হাজার কিলোমিটারের মতো কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হলেও বাংলাদেশ অংশে তা নেই। বাকি সীমান্ত অরক্ষিত।
পুলিশ সদর দপ্তর ও বিজিবি’র সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকাগুলো চোরাকারবারীরা বেশি ব্যবহার করছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, স›দ্বীপ, সীতাকুন্ড, রাঙ্গুনিয়া, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, রাঙামাটির সাজেক, খাগড়াছড়ির রামগড় ও সাবরুম, টেকনাফ ও উখিয়া, ফেনীর হাতিয়া, নোয়াখালী, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর বেনাপল, চৌগাছা সীমান্ত, কুষ্টিয়া, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, মংলা, উখিয়া, রামু, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রাউজান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, রাজশাহী গোদাগাড়ী, হিলি, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, সাতক্ষীরার শাকারা ও ভোমরা, মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও ভোলাহাট, লালমনিরহাটের বুড়িমারী, সিলেটের ডাউকি, কুমিল্লার সীমান্ত, সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র আসছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। আবার কোথাও কোথাও নিজস্ব পদ্ধতিতে অস্ত্র তৈরির কারখানা আছে বাংলাদেশে। কক্সবাজারের মহেশখালীতেও অস্ত্র তৈরি হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেন নিউজ পোস্টকে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গত ৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ২৩ দিন চলবে। এরপরও নির্বাচনের আগে পরের সময়গুলোতের অভিযান অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যেই সারাদেশে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট অনেক অবৈধ অস্ত্রধারী গ্রেপ্তার করেছে। বিপুল পরিমান অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপরই এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযানে নামে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
সুজন জানায়, নিয়ম অনুযায়ী সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে বৈধ অস্ত্রধারীরা তাদের অস্ত্র নিকটস্থ থানায় জমা দেন। পরে নির্বাচন শেষে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সেই অস্ত্র আবার ফেরৎ পান তারা। অতীতে কয়েকটি নির্বাচনে এমনটাই হয়েছে। কিন্তু এবার কেউই অস্ত্র জমা দেননি। এখনও পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র জমা নিতে নির্বাচন কমিশন কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নির্বাচনের আগে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে সেগুলোও জমা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
অপরাধ বিশ্লেষকরা জানান, অতীতে সংসদ নির্বাচনে থানায় বৈধ অস্ত্র জমা নিতো। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এটি জমা দেওয়ার কোন নিদেশনা আসছে না। এর ফলে নির্বাচনকে ঘিরে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার এবং সহিংসতার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সারাদেশে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা ৫০ হাজার ৩১০টি। এর মধ্যে পিস্তল ৪ হাজার ৬৮৩টি, রিভলবার ২ হাজার ৪৩টি, একনলা বন্দুক ২০ হাজার ৮০৯টি, দোনলা বন্দুক ১০ হাজার ৭১৯টি, শর্টগান ৫ হাজার ৪৪৪টি, রাইফেল ১ হাজার ৭০৬টি এবং অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র ৪ হাজার ৬টি। বাকি অস্ত্রগুলো বিভিন্ন আর্থিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামে লাইসেন্স করা হয়েছে।
অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞাঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত লাইসেন্সধারী ব্যক্তিদের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে জানিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঘোষিত তফসিল অনুসরণে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। যারা আদেশ লঙ্ঘন করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ নিউজ পোস্টকে বলেন, যাকে বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তার জীবনের ঝুঁঁকি রয়েছে বলেই সেটা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে আমরা একটা সহিংসতার আশঙ্কা করছি। তবে এই ব্যক্তিরা যখন নির্বাচনী প্রচারণা করবেন তাদের ওপর হামলা হবে না, এটা বলা মুশকিল। তাদের ব্যক্তি নিরাপত্তার জন্যই এসব অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। তাহলে উনি ব্যবহার করতে পারবেন না কেন। নির্বাচনের স্বার্থে কিছু নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। যদি নির্বাচনী প্রচারণার সময় ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়ে থাকে এবং অভিযোগ করা হয় তবে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা হবে। আমার মনে হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যক্তি নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই এই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।