নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পেছানোর দাবিতে প্রধান নির্বাচন কশিনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বরাবর লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন পেছানোর সুযোগ রয়েছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। ভোটগ্রহণের ৫২ দিন আগে গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। আজ মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে ই-মেইলে ও রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ইউনুছ আলী আকন্দ এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি তিনি নিজেই সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
ইউনুছ আলী আকন্দ জানান, লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে আইনগত (হাইকোর্টে রিট) পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ঘোষিত তফসিল পেছানোর জন্য নোটিশে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের বড় একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অনুপস্থিত রয়েছে। যদি তারা নির্বাচনে আসতে চায় সেক্ষেত্রে ভোটের তারিখ পেছানো উচিত। এছাড়া নির্বাচনের বিষয়ে বিদেশিদের চাপও রয়েছে।
লিগ্যাল নোটিশটি বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে কি না- জানতে চাইলে এই আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, না, বিএনপির পক্ষ থেকে নয়, জনস্বার্থে এই লিগ্যাল নোটিশ পঠিয়েছি।
তিনি বলেন, দেশে হরতাল-অবরোধ চলছে। মানুষের জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন পেছানোর দাবিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এর আগে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বড় দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ভোটের তারিখ পেছানোর সুযোগ বিবেচনায় আছে বলে জানিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান। গত বুধবার (২২ নভেম্বর) কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ইসি আনিছুর বলেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে তফসিল পেছানোর সুযোগ আছে। তারা (বিএনপিসহ বড় দলগুলো) নির্বাচনে আসতে চাচ্ছে, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে এমন কথা শুনছি। যদি তারা পর্দার অন্তরালে আলাপ-আলোচনা করে বা জোটবদ্ধ হয় তাহলে তফসিল পেছানোর সুযোগ আছে।
তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যা যা করা দরকার, সেসব বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয়। এ দায়িত্ব প্রার্থীর। ভোটার যা-ই উপস্থিত হোক, সেটাকে ফল হিসেবে ঘোষণা করা হবে। ভোটারের উপস্থিতি বেশি হলে আমরা সন্তুষ্ট হবো। প্রার্থীদের কাছে আবেদন থাকবে, তারা যেন ভোটারদের কেন্দ্রে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। আমরা সংবিধান মেনে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবো।
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা চাই যত বেশি বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবে নির্বাচনটি তত বেশি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য বলে মনে হবে।
ইসির ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন হবে। তফসিল অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আর মাত্র দুদিন বাকি থাকলেও এখনো দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলনে ব্যস্ত বিএনপি। ইসি আনিছুর বলেন, প্রতিটি জেলায় সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল সোমবার কমিশন ভবনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমাদের কমিশনাররা বলেছেন যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে তফসিল রিসিডিউল করা যেতে পারে, এটা নির্বাচন পেছানো বলা যায় না। তফসিল রিসিডিউল করে তাদের (বিএনপি) অ্যাকোমোডেট করা হবে।
বিএনপি ভোটে না আসলে কী করবেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে আমি উত্তর দেবো না। বিএনপিকে একবার নয়, দুবার নয়, পাঁচবার নয়, দশবার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা আসেনি। এখনো সময় আছে। সমঝোতা হলে আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। আশা করি, তারা যদি আসে পুরো জাতির জন্য সৌভাগ্য হবে। আমরা চাই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক।
তফসিল পেছানোর বিষয়ে সিইসি বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনাররা তফসিল পুনর্র্নিধারণের কথা বলেছেন। এর অর্থ এই নয় যে ভোটের তারিখ পেছানো হবে।