ঢাকা প্রতিনিধি:
মাদ্রাসা কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে ঢাকার দোহারে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন একটি প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা। ২০২৩ সালের এপ্রিলে উপজেলার দোহার খালপাড় গ্রামের এ ঘটনার দেড় বছর পর দুই ফ্রান্সপ্রবাসী ভাই সুবিচার দাবি করেছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে তাদের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন।
ওই ব্যক্তিরা হলেন দোহার খালপাড় গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ওরফে সোনা মিয়া গাজীর ছেলে সিরাজ গাজী (৫০) ও মিরাজ গাজী (৪৮)। তারা দীর্ঘদিন ধরে ফ্রান্সে থাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ছুটি কাটাতে দেশে ফিরেন। এ সময় তাদের বাবা ফজলুর রহমান গাজীর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মাদ্রাসাটির কমিটি নিয়ে স্থানীয় একটি পক্ষের সঙ্গে তাদের বিরোধ দেখা দেয়। ওই পক্ষের এক ব্যক্তিকে সভাপতি করতে বলেন দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন। এতে বাধা দেন তারা।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান সাদ্দাম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক উদয় চোকদারের নেতৃত্বে তাদের বাড়ি ঘেরাও করে দুর্বৃত্তরা। এ সময়ে বাড়িতে পুরুষ কেউ ছিলেন না। হামলাকারীরা ভাঙচুর চালিয়ে পরিবারের তিনজনের মোবাইল ফোন লুটে নেয়। তারা বিষয়টি জানিয়ে দোহার থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের কাছে বিচার দাবি করেন।
সিরাজ গাজী বলেন, বিচার চাওয়ায় আলমগীর হোসেনের নির্দেশে পুলিশের বেশ কয়েকটি দল গভীর রাতে তাদের বাড়ি ঘেরাও করে। এ সময় দোহার থানার তৎকালীন এসআই মো. জাহিদ হোসেন, এসআই সুলতান, এএসআই নান্টু কৃষ্ণের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। এ সময় পরিবারের ১২ সদস্যকে বেদম মারধর করা হয়।
এ সময় লোহার শাবল দিয়ে পিটিয়ে মিরাজ গাজীর ডান পা ভেঙে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা, চারটি স্মার্টফোন, ডায়মন্ডের আংটি ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায় হামলাকারীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তিন ভাই সিরাজ, মিরাজ ও সজিব গাজীকে মাদ্রাসা পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের তিন দিনের রিমান্ডে এনে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। ১৫ দিন জেল খেটে জামিনে ছাড়া পান তারা। কয়েকদিনের মাথায় একই কায়দায় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
সিরাজ গাজীর ভাষ্য, মে মাসে জামিনে ছাড়া পেয়ে তারা বাড়িতে ফেরেন। এ সময় জানতে পারেন তাঁর বাবা পুলিশের আঘাতে ও সন্তানের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসকরা জানান, মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে এ অবস্থা হয়েছে তাঁর। বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়ার রাতেই তাঁর বাবা মারা যান। এ ঘটনার বিচার দাবি করে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
এ ঘটনায় বক্তব্য জানতে আলমগীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মিজানুর রহমান সাদ্দাম ও উদয় চোকদারের সঙ্গেও যোগাযোগে ব্যর্থ হন এ প্রতিনিধি। জানা গেছে, তারা সবাই আত্মগোপনে আছেন। যোগাযোগ করা যায়নি দোহার থানার তৎকালীন এসআই মো. জাহিদ হোসেন, এসআই সুলতান, এএসআই নান্টু কৃষ্ণের সঙ্গেও। তারা বদলি হয়ে গেছেন। তবে তৎকালীন ওসি (বর্তমানে সারদায় কর্মরত) মোস্তফা কামাল বলেন, সুনির্দিষ্ট মামলায় তাদের আটক করা হয়েছিল। তারাও পুলিশের ওপর হামলা করেছিলেন। সেই ঘটনায়ও দোহার থানায় মামলা হয়েছে।