সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) একটি পুরান ব্রিজের সিংহভাগ রড বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এলজিইডির বিরুদ্ধে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাতে ট্রাকে তুলে রডগুলো নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পুরান ব্রিজের ইট দিয়ে পানির হাউজ বানিয়ে নতুন ব্রিজের নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ি নতুন ব্রিজ নির্মাণের শুরুতেই পুরান ব্রিজের রড, ইট ও অন্যান্য সামগ্রী উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে বুঝে দেবেন ঠিকাদার। তারপর কোটেশনে বিক্রি করে টাকা সরকারি কোষাগাড়ে জমা করতে হবে। কাজ শুরুর প্রায় এক বছর হতে চলেছে। পুরান ব্রিজের মালামাল নির্মাণাধীন ব্রিজের পাশেই পড়ে রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাটাগাড়ি জিসি রাস্তায় ৩৩২ মিটার চেইনেজ ও ২০ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ চলছে। ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তার পাশের একটি স্থানে কিছু মরিমাণ রড জরো করে রাখা হয়েছে। মোটা রডগুলোর একটিও নেই। পুরান ব্রিজের ইট ব্যবহার করে ব্রিজের দুইপাশে ৭টি পানির হাউজ তৈরি করা হয়েছে। হাউজ থেকে পানি নিয়ে নতুন ব্রিজের স্পাইলিংয়ের কাজ করা হচ্ছে। কিছু ইট ভাঙা ব্রিজের সাথেই রয়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী তাড়াশ পৌর এলাকার ভাদাশ গ্রামের বাসিন্দা আলহাজ উদ্দীন বলেন, আমার চায়ের দোকান কাটাগাড়ি রাস্তার পাশে। দোকানের সামনে ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। পুরান ব্রিজের বেশ পরিমাণ রড নির্মাণাধীন ব্রিজের পাশে রেখে দেওয়া ছিল। একদিন সকালে দেখি চার ভাগের তিন ভাগ রড নেই। পরে অন্যান্য দোকানদারদের কাছে রডের বিষয়ে জানার চেষ্টা করি।
শাজাহান নামে একজন মুদি দোকানদার বলেন, ‘রাত দশটার টার দিকে একটি ট্রাক বোঝাই করে পুরান ব্রিজের রড নিয়ে গেছে। বিশেষ করে মোটা রডগুলো সবই নিয়ে গেছে। দোকানদাররা জানতে চেয়েছিলেন কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রড। বলেছেন, আমরা এলজিইডির লোকজন। উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, জেলা নওগাঁর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইথেন এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড এন্ড ডন এন্টারপ্রাইজের (জেভি) সাথে ২ কোটি ৫৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মাণের চুক্তি সম্পন্ন হয়। পরে ঠিকাদার ও বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. অহিদুল ইসলাম গকুল ব্রিজ নির্মাণের কাজ কিনে নেয়। সর্বশেষ থার্ড পার্টি হিসেবে কাজ করছেন মো. ওয়াহিদুল ইসলাম নামে এক ঠিকাদার।
ঠিকাদার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, পুরান ব্রিজের মালামাল শুরুতেই প্রকল্পের (এসও) উপ-সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলামকে বুঝে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক ও সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাইফুল ইসলামকে অবগত করা হয়েছে। কাজের শুরুতে নতুন ইট দিয়ে দুইটি হাউজ করা হয়। পরে পুরান ব্রিজের ইট দিয়ে হাউজ করা হয়েছে। ব্রিজের স্পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়ে গেছে। পুরান ইট দিয়ে দেব।
প্রকল্পের (এসও) উপ-সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম বলেন, পুরান ব্রিজের মালামাল বিক্রির এস্টিমেটে ভুল ছিল। নতুন করে এস্টিমেট করা হয়েছে। দুই-চার দিনের মধ্যেই পুরান ব্রিজের রড, ইটসহ অন্যান্য সামগ্রী নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হবে। রড বিক্রির অভিযোগ সত্য নয়।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হকের বাবার মৃত্যজনিত কারণে ছুটিতে থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মুঠোফোনো চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাইফুল ইসলাম দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীকে বার-বার তাগাদা দেওয়া হয়েছে পুরান ব্রিজের ইট, রডসহ অন্যান্য সামগ্রী কোটেশনে বিক্রি করে দিতে। আমি দূর থেকে দেখতি পারছিনা। হয়ত নির্মাণাধীন ব্রিজের আশ-পাশে পুরান ব্রিজের রড ও ইট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এজন্য দেখতে কম মনে হচ্ছে।