জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ভাগনের হাতে খুন হওয়া স্ত্রী-মেয়েসহ বিকাশের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের গ্রামের বাড়ি তাড়াশ পৌরসভার শোলাপাড়া অনিবার্ণ মহাশ্মশানে তাদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
এসময় হাজার হাজার মানুষ তাদের শেষবার দেখতে ও শেষকৃত্য অংশ নিতে বিকাশের গ্রামের বাড়িতে ও শ্মশানে ছুটে যান। ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের পরে মরদেহ শ্মশানে নেওয়া হলে তাদের মরদেহে মুখাগ্নি করেন (চিতায় আগুন দেন) নিহত বিকাশের ভাতিজা অঙ্কণ সরকার। এর আগে বিকেল ৪টার দিকে মরদেহগুলো মর্গ থেকে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে তাড়াশ থানা পুলিশ।
এর আগে সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাড়াশ পৌর শহরের বারোয়ারি বটতলা এলাকার কালিচরণ সরকারের ছেলে বিকাশ সরকার, তার স্ত্রী স্বর্ণা রানি সরকার (৪০) ও মেয়ে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা সরকার তুষির (১৫) গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার গোস্বামী বলেন, মরদেহ আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তাদের শেষবারের মতো একবার দেখতে ও শেষকৃত্যে অংশ নিতে ছুটে যান। এলাকার মানুষ ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে সবাই ছুটে আসেন তাদের শেষ বিদায় দিতে। এসময় তাদের গ্রামের বাড়ি ও শ্মশানে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিল।
তিনি বলেন, এর আগে মরদেহগুলো এসে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। স্বজন ও সাধারণ মানুষদের কান্না ও আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার আকাশ-বাতাস। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় দিকে তাদের শেষকৃত্য (চিতায় আগুন দেওয়া) শুরু হয়ে রাত প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে বলেও জানান তিনি।
নিহত বিকাশের বড়ভাই তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রকাশ সরকার বলেন, আমরা যে কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি এটা বলার মতো না। তাদের মরদেহ এসে পৌঁছালে প্রথমে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। এরপর ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে নেওয়া হয় শ্মশানে। সেখানকার রীতিনীতি পালন করে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। এসময় তাদের মুখাগ্নি করে আমার ছেলে অঙ্কণ সরকার। সেই যাবতীয় ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করবে।
তাড়াশ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নূরে আলম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে শহীদ এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে নিহতদের মরদেহ আসলে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের মাধ্যমে মরদেহগুলো তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর সন্ধ্যায় চালা মাগুরা মহাশ্মশানে (শোলাপাড়া অনিবার্ণ মহাশ্মশান) তাদের মরদেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
প্রসঙ্গত, এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মন্ডল জানান, ব্যবসায়ীক লেনদেনের জেরে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে মামার বাসায় যান ভাগনে রাজীব। এরপর একে একে মামাতো বোন, মামি ও মামাকে হত্যা করেন রাজীব। গ্রেপ্তারের পরে পুলিশের কাছে হত্যার পরিকল্পনা ও লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন রাজীব।
নিহত বিকাশ সরকার হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তাড়াশ উপজেলা শাখার কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। বিকাশরা দুই ভাই ও পাঁচ বোন। বিকাশ সবার ছোট ছিলেন। তাদের পরিবারের এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুরো তাড়াশ জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।