নীরব এলাকা গড়তে আশাবাদী নাগরিকরা

প্রকাশিত: ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২৪

ঢাকা প্রতিনিধি:

ঢাকা শহরে ফাঁকা রাস্তায়ও বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে ছোটে গাড়ি। অন্যের কান ঝালাপালা হলেও চালকের তাতে কিছু এসে যায় না। অনেক চালকের মনোভাব দেখে মনে হয়, শুধু হর্ন দিলেই সব সমাধান হয়ে যাবে, কিন্তু হয় উল্টোটা। সমাধানের বদলে আশপাশে থাকা মানুষ মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতে ঢাকার একটি সড়ককে পরীক্ষামূলক ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণার কর্মসূচি হাতে নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ১ অক্টোবর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুই পাশের তিন কিলোমিটার ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হয়। শব্দদূষণ রোধে চলছে সচেতনতামূলক কার্যক্রম। ফলে ওই সড়কে হর্নের প্রবণতা কিছুটা কমেছে।

পরিবেশ সচেতন মানুষ নীরব এলাকা গড়তে আশাবাদী হয়ে উঠেছে। নীরব এলাকা ঘোষণার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন তারা। নাগরিকরা বলছেন, এক দিনে একটি এলাকাকে শব্দদূষণমুক্ত করা যাবে না। টানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে। এমন উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকারের সব দপ্তরের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। পরীক্ষামূলকভাবে একটি এলাকা পরিপূর্ণভাবে শব্দ দূষণমুক্ত করতে পারলে ক্রমেই তা পুরো শহরেও করা সম্ভব হবে। এরই ধারাবাহিকতায় একদিন একটি পরিপূর্ণ ‘নীরব দেশ’ অর্জন করা যাবে।
নীরব এলাকা ঘোষণার চতুর্থ দিন শুক্রবারও বিমানবন্দর সড়কে স্টিকার, লিফলেট বিতরণ, মৌখিক অনুরোধসহ বিভিন্নভাবে চালকদের সচেতনতার কার্যক্রম চলে। শব্দের তীব্রতা নির্ণয়ে কাজ করছে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। এ ছাড়া গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শব্দদূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ছাত্র-যুব সমাবেশ ও র্যায়লি হয়েছে। পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েস আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশ নেয় রাজধানীর নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দর এলাকায় কাজ করছে।

সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নাগরিকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্র্বতী সরকারে পরিবেশ উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন পরিবেশকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সারাজীবন তিনি পরিবেশ নিয়েই কাজ করেছেন। শব্দদূষণের বিরুদ্ধে তাঁর উদ্যোগে সচেতন মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছে। শব্দদূষণ বন্ধে শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয় নয়, সিটি করপোরেশন, বেবিচক, বিআরটিএ, ঢাকা ট্রাফিক পুলিশ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, পরিবহন মালিক সমিতি, গণমাধ্যমসহ সব স্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে।
বিমানবন্দর এলাকায় প্রাইভেটকারচালক আব্দুর রহিম বলেন, আমি বিদেশি গাড়ি চালিয়েছি। সেখানে কোনো হর্ন নেই। বাংলাদেশকেও হর্নমুক্ত করা সম্ভব। তবে সময় লাগবে। সরকার খুব ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। সচেতনতার পাশাপাশি জরিমানা ও মামলা না দিলে হর্ন বন্ধ হবে না। পথচারীদের সড়ক পারাপার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। প্রতিটি গলির মুখে বড় আয়না থাকলে মোড় ঘুরতে চালকদের হর্ন বাজাতে হবে না।

বিমানবন্দর সড়কে সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মাহমুদা আক্তার বলেন, দীর্ঘদিনের অভ্যাস দূর করতে হলে টানা সচেতনতা চালাতে হবে। সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করে পুলিশকে হর্ন বাজালে শাস্তি প্রয়োগ করতে ক্ষমতা দিতে হবে। ঢাকায় যদি ‌সফল হওয়া যায়, তাহলে এটা অন্য এলাকায়ও প্রয়োগ করা যাবে।
ক্যাপসের পরিচালক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বিশ্বের সব নগর-মহানগর, হাইওয়ে এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতে গাড়ির হর্ন শোনা যায় না। চীনের শহরগুলোতে বিনা কারণে হর্ন বাজানো অপরাধ। নিউইয়র্কে হর্ন বাজানো মানে সামনের গাড়ি চালককে গালি দেওয়া। থাইল্যান্ডে ড্রাইভিং শেখার সময় ট্রাফিক নিয়মকানুন শিক্ষার পাশাপাশি গাড়ির হর্ন কখন বাজাতে হবে, কখন হবে না– এটিও শেখানো হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার পরীক্ষায় হর্ন বাজানোর বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়। সঠিক উত্তর না দিতে পারলে আবার ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয়। শুধু থাইল্যান্ড নয়। সব দেশেই ড্রাইভিং শিক্ষা কোর্সে হর্ন বাজানোর নিয়মকানুন অন্তর্ভুক্ত আছে। আমাদের দেশেও বিনা কারণে হর্ন বাজানো অপরাধ। বাংলাদেশে একজন ড্রাইভারও বলতে পারবে না তাঁকে হর্ন বাজানোর বিষয়ে কে শিক্ষা দিয়েছেন। অন্তত একটি এলাকাকে হর্নহীন করা গেলে, তা মডেল হিসেবে পরবর্তী কার্যক্রমে ব্যবহার করা যাবে। সরকারের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের এগিয়ে আসতে হবে।
গ্রিন ভয়েসের প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির বলেন, ১ অক্টোবর থেকে বিমানবন্দর এলাকায় হর্ন আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। সবাইকে সচেতন করা গেলেই এ উদ্যোগ সফল হবে। তিনি বলেন, ট্রাফিক বিভাগ থেকে নিয়মিত প্রচার চালাতে হবে। ড্রাইভিং শেখানোর সময় ট্রাফিক আইন শেখানোর পাশাপাশি চালককে শিক্ষা দিতে হবে হর্ন বাজানোর নিয়ম। ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর আগে গ্রহণ করা পরীক্ষায় হর্ন বাজানো সম্পর্কে চালক কতটুকু অবহিত, তা জানতে হবে। শব্দদূষণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে চালাতে হবে ব্যাপক প্রচার। সর্বোপরি শব্দদূষণে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।