ঢাকা প্রতিনিধি:
ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও অন্যান্য ক্লিনিকে প্রতিদিনই বাড়ছে কুকুর-শিয়ালে কামড়ানো রোগীর ভিড়। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্কের টিকা না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
গত অক্টোবর মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্ক হয়, এমন প্রাণীর (কুকুর, শিয়াল, বেজি, বাঁদুড় ও বিড়াল) কামড়ে আক্রান্ত রোগী এসেছেন ৪৬৪ জন। তাদের মধ্যে ২৬৯ জন পুরুষ, ১৯৫ জন নারী। এর মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী ১৭১ জন এবং ১৫ বছরের ওপরে রয়েছেন ২৯৩ জন।
এ ছাড়া চলতি মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি এসেছেন কুকুরসহ অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর কামড়ে আহত হয়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা এসব রোগীর একটি অংশ পাশের উপজেলা সাভারের আশুলিয়া এলাকার।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর এক দিনে কুকুরে কামড়ানো ৩৯ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক এআরভির (অ্যান্টি র্যাবিস ভ্যাকসিন) সরবরাহ নেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ফলে প্রতিদিনই হাসপাতালে কুকুরের কামড়ে আহত লোকজন এলেও বিনামূল্যে সরকারি ভ্যাকসিন মিলছে না। একের পর এক কুকুরের কবলে পড়ে জলাতঙ্কের ঝুঁকি এবং সরকারি ভ্যাকসিন না থাকায় আতঙ্কে রয়েছেন ধামরাইবাসী।
কুকুরের কামড়ে আহত ধামরাইয়ের সুতিপাড়া এলাকার জুবায়ের হোসেনের স্বজনরা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন না থাকায় তাদের বাহির থেকে ভ্যাকসিন কিনে আনতে হয়েছে। এর পর হাসপাতাল থেকে সেবা দিয়েছে। তারা আক্ষেপকরে বলেন, সরকারি ভ্যাকসিন পেলে তাদের জন্য উপকার হতো।
সোমবার ধামরাই পৌরসভার বাসিন্দা খুররম চৌধুরী টুটুল বিড়ালের আঁচড়ে আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে টিকা পাননি। পরে ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসিন কিনে তাঁকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
কুশুরা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিনিও একবার কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছিলেন। হাসপাতালে যখন চারজন কুকুরে কামড়ানো রোগী একত্র হয়, তখন টিকা দেওয়া হয়। রোগী না থাকলে তাঁকে অনেকক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হতো।
গোপালকৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুল কাদের বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যদি কুকুরে কামড়ানো রোগীদের টিকা দিত, তাহলে এতটা হয়রানি হতো না। বাহির থেকে জলাতঙ্কের টিকা নিতে অনেকেই অনীহা প্রকাশ করেন। গ্রামের প্রান্তিক মানুষকে কুকুর বা অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী কামড়ালে তারা শুধু কবিরাজি চিকিৎসা নেয়। এতে বিপদ হতে পারে।
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের সহকারী চিকিৎসক আয়েশা আক্তার জানান, তাদের হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেই। তারা রোগীদের চারজনের গ্রুপ করে দেন। এই চারজন টিকা কিনে আনলে তারা টিকা পুশ করে দেন। এতে রোগীদের খরচ কম হয়। তারা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে দাবি করেন তিনি।
পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পৌরসভার কুকুর নিধন প্রকল্পটি উচ্চ আদালত (হাইকোর্ট) বন্ধ করে দেওয়ায় পাড়ামহল্লায় বেড়েই চলছে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা। এসব কুকুরের কামড়ে যেন জলাতঙ্ক রোগ না ছড়ায়, সেজন্য নেওয়া হয়েছিল কুকুরকে ভ্যাকসিন (টিকা) দেওয়ার কর্মসূচি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফারসিম তারান্নুম হক সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাসখানেক ধরে ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই। মাঝে মাঝে অনেক হাসপাতালেই এমন হয়। যখন সরবরাহ থাকে না, তখন রোগীদের কিনে নিতে হয়। তারা ভ্যাকসিনের জন্য চাহিদাপত্র জমা দিয়েছেন। ভ্যাকসিন সরবরাহ হলে তখন বিনামূল্যে দেওয়া হবে। যারা কুকুর, শিয়াল, বেজি, বিড়ালসহ অন্য প্রাণীর কামড়ে আহত হয়ে আসেন, তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে ভ্যাকসিন নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়।