ক্রীড়া ডেস্ক:
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ না হলেও দহন থাকারই কথা নাজমুল হোসেন শান্তর। কারণ সময়টা ভালো যাচ্ছে না তাঁর। অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে ক্ষয়িঞ্চু পারফরম্যান্স চোখে পড়ার মতো। টেস্ট ও টি২০তে রান করার গ্রাফ নিম্নমুখী। তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন কেবল ওয়ানডেতে। শান্তর এই ব্যাটিং পারফরম্যান্স হয়তো পুরো দলকেই প্রভাবিত করছে। নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বড় ইনিংস খেলায়। যদিও নিজের ব্যাটিং নিয়ে চিন্তিত নন শান্ত।
সংবাদ সম্মেলনে যতবারই এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, তিনি বলেছেন– ‘একটি ভালো ইনিংস সবকিছু ঠিক করে দেবে।’
শান্তর ভালো ইনিংস খেলা হচ্ছে না অনেক দিন। টেস্টে ২০২৩ সালের নভেম্বরে সেঞ্চুরি করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজের প্রথম ম্যাচ ছিল সেটি। এর পর শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সাত টেস্টে একটি মাত্র ফিফটি। সেটিও অকার্যকর। রান করার জন্য ভারত সফর থেকে ব্যাটিং অর্ডারও পরিবর্তন করেছেন বাঁহাতি এ ব্যাটার। মুমিনুল হককে তিনে প্রমোশন দিয়ে অধিনায়ক খেলছেন চারে। এই পরিবর্তনেও ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি। সেট হয়েও বেশির ভাগ ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। তবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজ শুরুর আগে দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জোড়া সেঞ্চুরি আছে তাঁর মিরপুরে। ওই পারফরম্যান্সের পরই মূলত কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, শান্তকে দীর্ঘ মেয়াদে অধিনায়ক করা হলে আপত্তি নেই। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিনায়ক করে বিসিবি।
এর পর থেকেই শান্তর ব্যাটিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে। টি২০ ক্রিকেটে প্রভাবটা টেস্টের মতোই ১৮ ইনিংসে কোনো হাফ সেঞ্চুরি নেই। বিশ্বকাপে ম্যাচ উইনিং ইনিংস নেই। এ নিয়ে ব্যাপক ট্রল হচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে শান্তর অধিনায়কত্ব নিয়েও। টেস্টে ট্র্যাডিশনাল অধিনায়ক মনে করা হয় তাঁকে। তবে কি নেতৃত্বের চাপে স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারছেন না শান্ত? ভারতে টেস্ট চলাকালে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল সাবেক নির্বাচক হাবিবুল বাশারকে।
তিনি বলেছিলেন, ‘শান্তকে এখনই বাদের তালিকায় ফেলা ঠিক হবে না। আমি বিশ্বাস করি, সে রান করবে। এখন হয়তো আত্মবিশ্বাসে একটু ঘাটতি আছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে তাকেই। তবে আমি মনে করি, তার অধিনায়কত্বের ব্যাপ্তি কমালে ভালো হবে। কারণ এখন তিন সংস্করণে নেতৃত্ব দিতে গেলে ব্যাটিংয়ে ফোকাস রাখা কঠিন। তাই ফরম্যাটগুলো আলাদা করে অধিনায়কও আলাদা করা যেতে পারে। তিন অধিনায়ক না হলেও লাল ও সাদা বলে আলাদা করা যেতে পারে।’
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সংগ্রাম করতে হচ্ছে শান্তকে। টেস্টে মোটামুটি ভালো করলেও টি২০তে সফল ছিলেন না। ২০২২ সালের টি২০ বিশ্বকাপ দিয়ে উত্থান তাঁর। গত বছর এক দিনের ক্রিকেটেও ধারাবাহিক ছিলেন। শেষ আট ইনিংসে একটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফ সেঞ্চুরি আছে। এক দিনের ক্রিকেটে তাঁকে নিয়ে হয়তো প্রশ্ন নেই। কিন্তু বাকি দুই সংস্করণে ধুঁকতে থাকা শান্তকে চাপমুক্ত খেলার সুযোগ করে দেওয়া প্রয়োজন মনে করেন অনেকেই। বিষয়টি শান্তর ভালো না লাগলেও বাস্তবতা মেনে নিয়ে পারফরম্যান্সমুখী হওয়ার স্বার্থে প্রয়োজনে এক ফরম্যাটে নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন।