মায়ের এক ফোঁটা দুধের দাম, কাটিলে গায়ের চাম, পাপস বানাইলেও—–। নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের এক অভাগীনি মায়ের সংগ্রামী জীবন কাহিনী। ক্ষুধা আর প্রতিবন্ধী সন্তানের যন্ত্রণার বোঝা মাথায় নিয়ে গলায় দড়ি বেঁধে গ্রামে গ্রামে হাট বাজারে দীর্ঘদিন যাবৎ ভিক্ষা করছেন বৃদ্ধা জামেনা খাতুন। নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের শৈলডহর গ্রামে বোনের ভিটাতে বসবাস জামেলা খাতুনের।
৩৭ বছর বয়স জাকির হোসেনের। স্বামীর মৃত্যুর পর প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা করেন জামেলা। এরপর বোনের বাড়িতে ছোট্ট খুপরির মাঝে ছেলেকে নিয়ে থাকেন জামেলা। প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে যা কিছু পান তা দিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে বেঁচে আছেন এ সংগ্রামী নারী আর তার প্রতিবন্ধী সন্তান।
সুমেশ্বরী নদীর এ পাড়ে শিবগঞ্জ বাজার। প্রতি সপ্তাহে এ বাজারে ভিক্ষা করতে আসেন মা-ছেলে। কোনোদিন ১০০, কোনোদিন দেড় শ টাকা ভিক্ষা মেলে। এভাবেই চলে তাদের সংসার।
জামেরা জানান, গতকাল শুক্রবার শিবগঞ্জ বাজারে ভিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন। পেয়েছেন মাত্র ১৫৫ টাকা। এ দিয়ে ৩ কেজি চাল আর ১টি ছোট্ট মাছ কিনেছিলেন। রাতে আর রান্না করতে পারেননি। তাই শনিবার দুপুরে রান্না করে খাচ্ছেন।
জামেলা আরো জানান, জাকির এক সময় উশৃঙ্খল হয়ে যায়। মাথা গরম হলে তাকে আর ধরে রাখা যায় না। নখ দিয়ে নিজের শরীরের চামড়া ছিঁড়ে ফেলে। আমাকে কামড় দেয়। কতজনের কাছে গিয়েছি একটা ঘরের জন্য। ছেলের চিকিৎসার জন্য কিছু সাহায্য। বুঝতে পারতাম তার মাথা গরম হয়ে যায় কেন। কিন্তু তেমন কোনো ভালো ডাক্তার দেখাতে পারিনি।
তিনি বললেন, আমি যদি হঠাৎ মরে যাই তাহলে আমার সন্তানের কি হবে। যদি কোনো এতিমখানায়ও দিতে পারতাম তাহলে মরেও শান্তি পেতাম। কার আপদ কে সামরায়।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানম জানান, মা ও প্রতিবন্ধী ছেলে দুজনই সমাজসেবা কর্তৃক ভাতার আওতায় এসেছে। খুব দ্রুত তাদের একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।