মোঃ সাইফুল ইসলাম
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা আখতারুজ্জামান শাহীনের সহযোগী নেপালে আটক সিয়ামকে হেফাজতে নিয়েছে কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশ (সিআইডি)।কলকাতা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে, আত্মগোপনে থাকা সিয়ামকে ভারত-নেপাল সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখান থেকে শনিবার (৮ জুন) তাকে কলকাতায় আনা হচ্ছে।
এর আগে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমানও সাংবাদিকদের জানান, নেপাল পুলিশ গ্রেপ্তার সিয়ামকে শুক্রবার ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। সিআইডির কর্মকর্তারা সেখানেই সিয়ামকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত যেখানে ঘটনা সংঘটিত হয়, সেখানে তদন্ত হয়। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের আইনে আছে, বিদেশে যদি কোনও বাংলাদেশি অপরাধ করে থাকে সেই অপরাধীকে বাংলাদেশে এনেও বিচার করতে পারি।
এ ঘটনা ভারতের পুলিশ তদন্ত করছে, বাংলাদেশ পুলিশও তদন্ত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তদন্তের বিষয়ে দুই দেশ একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
এদিকে সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, সিয়াম নেপালে আত্মগোপন করে আছে, কলকাতার সিআইডি ও বাংলাদেশ পুলিশ এ খবর আগেই পেয়েছিল। এরপরই তদন্তের জাল বিস্তার করা হয়। সিয়ামকে কলকাতায় আনার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
কলকাতায় এমপি আজীম হত্যাকাণ্ডের পর সেখানে ক্যাবচালক জুবেইর ওরফে জিহাদ হাওলাদার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাকে ‘কসাই জিহাদও’ বলা হচ্ছে। সে এখন জেল হেফাজতে রয়েছে। তার আগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও বেশ কিছু সূত্র পাওয়া যায়। সিআইডি জানতে পারে, এই খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন কলকাতা থেকে নেপাল হয়ে আমেরিকায় পালিয়ে গিয়েছে। আর তার সহযোগী সিয়াম নেপালেই আত্মগোপন করে আছে। পরে নেপালে যায় সিআইডির একটি টিম। একই ঘটনায় ঢাকা থেকে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিমও সেখানে যায়।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। এরপর ২২ মে সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়।
খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্যকে হত্যার পর মরদেহ ফেলার কাজে অংশ নেওয়া মুম্বাই থেকে ভাড়া করে আনা কসাই জিহাদকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ। জিহাদ কলকাতা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। আর ঢাকায় ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি ওরফে তানভীর ভূঁইয়া। এই তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এদিকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
আটক হওয়া কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক। তিনি আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহিন এবং হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক চরমপন্থি নেতা শিমুল ভুঁইয়ার আত্মীয়।