নোয়াখালীর আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও ৯০ ভাগ মানুষ, বাড়ছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ

প্রকাশিত: ১:৫৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

নোয়াখালীতে গত ছয়দিন ধরে বৃষ্টিপাত তেমন একটা না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামলেও সার্বিক পরিস্থিতির অনেকটা ভালোর দিকে। জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে ১০ ভাগ মানুষ বাড়ি ফিরলেও এখনও ৯০ ভাগ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। এদিকে বন্যা পরবর্তী বাড়ছে ডায়ারিয়া ও পানিবাহিত রোগ।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বলেন, ‘ডায়রিয়া রোগী ও চর্ম রোগীর সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দুর্গত এলাকায় বাড়ছে বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের সংকটও। বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বয়স্করা। এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুজন মারা গেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডায়রিয়ার প্রকোপ যাতে মহামারি আকারে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য আমরা বন্যাকবলিত এলাকায় ২ লাখ ৬০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন সরবরাহ করেছি। চর্মরোগের চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবায় ১২৪টি সরকারি ও ১৬টি বেসরকারি মেডিকেল টিম কাজ করছে।’
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ও জেলা সিভিল সার্জন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৪২ জন ডায়রিয়া এবং ২৮ জন সাপের কামরে আহত রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এরমধ্যে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ৩০৫ জন ডায়রিয়া ও ২৫ জন সাপের কামড়ের রোগী এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৩৭ জন ডায়রিয়া এবং ৩ জন সাপের কামড়ে আহত রোগী ভর্তি রয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল জানিয়েছেন, জেলায় গত দিনে (সোমাবার সন্ধ্যা পর্যন্ত) জেলায় ৯ সেমি পানি কমেছে। তবে গতরাতে বৃষ্টিতে সামান্য পানি বেড়েছে।

জেলার বন্যাকবলিত আটটি উপজেলা সাতটি পৌরসভার মধ্যে বেগমগঞ্জ, সদর, সেনবাগ, চাটখিল, সোনাইমুড়ী ও কবিরহাট উপজেলার অধিকাংশ সড়কের কোথায়ও হাঁটু সমান, কোথায়ও হাঁটুর নিচে পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

এসব এলাকার বেশির ভাগ বসতঘরে এখনও পানিতে ডুবে আছে। এ পরিস্থিতিতে বন্যার পানি নামার যে গতি, তাতে আরো এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগতে পারে বলে মনে করেন বন্যার্ত মানুষজন। এ পরিস্থিতিতে আশ্রয়কেন্দ্রের ৯০ ভাগ আশ্রিত মানুষ বাসবাড়িতে ফিরতে পারছেন না।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান খান জানান, জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে ১৭ লাখ ৯ হাজার ৩০০ জন পানিবন্দী, ১ হাজার ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৪১ জন মানুষ রয়েছেন। এতে করে গত ৫ দিনে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা কমছে প্রায় ৪ লাখ ও আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা কমেছে ৩৪৭টি এবং আশ্রিতের সংখ্যা কমেছে প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার। ভয়াবহ বন্যার পানিতে ডুবে, বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে ও ডায়রিয়ায় ১১ জন মারা গিয়েছেন।

টানা গত ১৫ দিনে আশ্রয়কেন্দ্র ও লাখ-লাখ পানিবন্দী মানুষের ত্রাণ সহায়তা করতে প্রশাসন ও বেসরকারি সংস্থাগুলো হিমসিম খেতে হয়েছে। গত দুইদিন থেকে সরকারি ও বেসরকারি এাণসামগ্রী দিন-দিন কমে যাওয়ায় বর্ন্যার্ত মানুষদের নিয়ে বিপাকে রয়েছে প্রশাসন। বর্ণার্তদের জন্য এখন মজুদ রয়েছে ৩০ লাখ টাকা, সাড়ে ৮১ মে.টন চাল ১০ হাজার শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্য।