ন্যূনতম এলসি মার্জিনে আনা যাবে ১১ নিত্যপণ্য

প্রকাশিত: ৩:৫১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০২৪

সেলিনা আক্তার:

আসন্ন রমজানে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে খেজুর, ডিম, চাল, তেল, চিনি, ডালসহ ১১ পণ্যে ন্যূনতম মার্জিন বা নগদ জমার বিপরীতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার সুযোগ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে শূন্য মার্জিনেও এসব পণ্যের এলসি করা যাবে।

গত রমজানের আগে আট পণ্যের এলসিতে ন্যূনতম মার্জিনের নির্দেশনা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবার তার সঙ্গে ডিম, চাল ও গম যুক্ত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা সব ব্যাংকে পাঠানো হয়। এদিকে, রমজানকে কেন্দ্র করে সরকারি পর্যায়ে নিত্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোগ্যপণ্য আমদানি ও সরবরাহকারী বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান সাধারণত ন্যূনতম মার্জিনে এলসি খুলে থাকে। তবে ডলার সংকট শুরুর পর আমদানিতে কঠোরতার আওতায় বিদেশি ফলে শতভাগ এলসি মার্জিনের বিধান করা হয়। সে অনুযায়ী খেজুর আমদানিতে এখন শতভাগ মার্জিনের বিধান রয়েছে। আর চাল ও ডিম আমদানিতে সরকারের বিশেষ অনুমোদন নিতে হয়। এখন এসব ক্ষেত্রে এলসির শর্ত শিথিল হলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, আমদানি সহজীকরণের মাধ্যমে মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ প্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা এবং খেজুর আমদানির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিনের হার ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলো। অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত যা বলবৎ থাকবে।
এলসি মার্জিন বলতে কোনো পণ্য আমদানির সময় ন্যূনতম জমাকে বোঝানো হয়। সাধারণত কোনো পণ্যের এলসি খোলার নির্ধারিত সময় পর তা দেশে আসে। দেশে আসার পর কিছু প্রক্রিয়া শেষে নির্ধারিত অর্থ জমা করে পণ্য খালাস করেন আমদানিকারক। আর এলসি খোলার সময় ৫, ১০ শতাংশ মার্জিন তথা নগদ জমা দেন। তবে আমদানি কঠোর করার লক্ষ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যপণ্য, ওষুধসহ কয়েকটি ছাড়া ন্যূনতম ৭৫ থেকে শতভাগ মার্জিন তথা পুরো এলসি মূল্য জমা রাখার বিধান করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী সমকালকে বলেন, বিদেশি ফল হিসেবে খেজুরে শতভাগ এলসি মার্জিন দিতে হয়। তবে রমজানে বিশেষ চাহিদা বিবেচনায় আগামী মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এলসি করা যাবে। খেজুরসহ রমজানে অন্য যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, সেখানেও ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম মার্জিনের কথা হয়েছে। এ নির্দেশনার ফলে শূন্য মার্জিনে এলসি খুললেও কোনো সমস্যা হবে না।

এক লাখ টন চাল-গম আমদানি করছে সরকার

চিনি, গম, চাল, খেজুর, মসুর ডালসহ রোজাকেন্দ্রিক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। ভারত থেকে ৫০ হাজার টন বাসমতি চাল এবং সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৪৬৭ কোটি ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি বা দাম বাড়ার কারণে যেন ভোক্তাদের কষ্ট না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে চাল ও গমের পাশাপাশি চিনি ও এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারতের ভেলপুর পট্টাভি এগ্রো ফুডস প্রাইভেটের কাছ থেকে ৫০ হাজার টন ননবাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। প্রতি টন ৪৭৭ ডলার দরে এ চাল আমদানিতে ব্যয় হবে ২৮৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া সিঙ্গাপুরের এগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনাল পিটিই থেকে ৫০ হাজার টন গম আমদানি করা হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮০ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। একই সঙ্গে কাতার থেকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার, দেশীয় প্রতিষ্ঠান সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ৫ হাজার টন চিনি এবং সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ড থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ নৌপথ খননে ২৬৩ কোটি টাকার প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়।

বৈঠক শেষে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খাদ্যদ্রব্যের মজুত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে কী কী জিনিস আমদানি বা মজুত করতে হবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে, এসব বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। কী কী জিনিস আমদানি করতে হবে, কোন দামে ও কখন করতে হবে, তাও মন্ত্রণালয় থেকে বলে দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে তা আসবে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা।