নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বাদে বাকি দশটি সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা পদে পুনর্বহাল হতে চান। সোমবার (৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে এমন দাবি জানিয়ে আলোচনা সভা করেছে বাংলাদেশ সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিল।
বক্তারা বলেন, কাউন্সিলররা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে রাত দিন পরিশ্রম করে আসছে। তারা সব ধরনের নাগরিক সেবা প্রদান করে আসছে। সরকারের যাবতীয় সেবামূলক কাজগুলো পরিচালনার পাশাপাশি ওএমএস, টিসিবি, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, শিশুভাতা, সব প্রকার টাকা কার্যক্রম ও সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী সকল প্রকার সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা, সিডিসি, প্রেস ক্লাব, রূপান্তর, ওয়ার্ড ভিশন, আশ্রয় ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাকসহ বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনসহ দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য সেবা দিয়ে থাকেন।
আয়োজনের আহ্বায়ক গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট মো. নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বাংলাদেশ সিটি কর্পোরেশন কেন্দ্রীয় কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, কাউন্সিলররা স্থানীয়ভাবে সেবা দিলেও এমপির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। স্থানীয় সরকারের শাসন বিভাগের একমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি হচ্ছেন কাউন্সিলররা। তাদের পরিচয় তারা নিজেরা তৈরি করতে পারে নাই। ফলে কাউন্সিলররা পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছেন। সচিব, এমপি, মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির চারিত্রিক সনদ ইস্যু করেন কাউন্সিলররা। তাছাড়া জন্ম, মৃত্যুসহ সব নিবন্ধন কাউন্সিলরের কাছ থেকে নিতে হয়। তাই কাউন্সিলররা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তাদের বুঝতে হবে এমপি তাদের বড় ভাই না। কাউন্সিলররা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে নাই বলে বিভিন্ন সরকার তাদের তাচ্ছিল্য করছে। দেশের স্থানীয় সরকার যত শক্তিশালী, সেই দেশ তত উন্নত। তাই বিদেশিরা আসলে তারা সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদের কাজ দেখতে যায়।
কাউন্সিলরদের অধিকার আদায়ের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণকে বুঝাতে হবে সংসদ সদস্য আর কাউন্সিলরের এক নয়। তারা কোনো এমপির ছোট ভাই নয়। এই বিষয়গুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। জনগণকে এই পার্থক্য বোঝাতে পারলে তারা এমপির কাছে যাবে না, আপনাদের কাছে আসবে। কাউন্সিলররা একটু বদ্ধ ভাবে কাজ করতে পারলে তাদের হারানো গৌরব ফিরে আসবে। তাছাড়া আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কাউন্সিলরদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহাসমাবেশ করে সরকারকে বুঝিয়ে দিতে হবে, আপনাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা কী। এভাবে করতে পারলে আপনারা কামিয়াব হবেন।
এ সময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, রাষ্ট্র চিন্তক ও গণসংগঠক এবং যুক্ত ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক সরদার শামস্ আল-মামুন (চাষি মামুন), ডিইউজের নির্বাহী সদস্য এম মোশাররফ হোসাইন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী গোলাম কিবরিয়া ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের (সংরক্ষিত) সাবেক কাউন্সিলর মোসাম্মৎ আয়শা আক্তার দিনা বক্তব্য দেন।
এর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের অপসারণ করেছে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। স্থানীয় সরকার বিভাগের থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সিটি কর্পোরেশনগুলো হলো- ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন।
এদিন পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে দেশের ৩২৩টি পৌরসভার কাউন্সিলর এবং তিনটি পার্বত্য জেলা ছাড়া বাকি ৬১টি জেলা পরিষদের সদস্যদেরও অপসারণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ আগস্ট দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশন এবং ৩২৩টি পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ করা হয়েছিল। একই দিন অপসারণ করা হয়েছিল দেশের ৬০ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের। তারপর এসব পদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।