পদ্মা নদীতে হামলায় নিখোঁজ পুলিশ কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধার
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পদ্মা নদীতে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। এ ঘটনায় নৌকা থেকে নদীর পানিতে পড়ে পুলিশের দুই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নিখোঁজ হন। নিখোঁজের একদিন পর এএসআই সদরুল আলমের মরদেহ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ এলাকায় নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ অপর এএসআই মুকুল হোসেনকে উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমারখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম।
এর আগে রোববার (২৭ অক্টোবর) দিবাগত রাতে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বেড় কালোয়া এলাকায় পদ্মা নদীতে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পুলিশের এক সদস্য ও তাদের সঙ্গে থাকা দুই ইউপি সদস্য।
স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা জানান, কুমারখালীর বেড় কালোয়া এলাকায় পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন জেলেরা। জেলেদের কাছে অনৈতিক সুবিধা বা মাছ চাওয়ায় এ হামলার শিকার হন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় তাদের হামলায় আহত হন এক পুলিশ সদস্য এবং দুই ইউপি সদস্য। নিখোঁজের একদিন পর এএসআই সদরুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরেক পুলিশ কর্মকর্তা। ওই এলাকায় জেলেদের প্রধান ইয়ারুলের নেতৃত্বে পদ্মায় একটি বাহিনীও আছে। তাদের লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে।
কুমারখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, রোববার দিবাগত রাতে মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পদ্মার ওপারে চর সাদীপুর এলাকায় ছয়জন পুলিশের একটি টিম অভিযানে যাচ্ছিল। এ সময় পদ্মা নদীতে তাদের নৌকা ডুবিয়ে দেয় কতিপয় দুষ্কৃতকারীরা। চার পুলিশ সদস্য নদী থেকে উঠে আসতে পারলেও দুইজন এখনো নিখোঁজ। তাদের মধ্যে এএসআই সদরুল আলমের মরদেহ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আরেক এএসআই এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা হয়নি। কাউকে আটক করা যায়নি।
নিহত সদরুল আলম কুমারখালী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ছিলেন। নিখোঁজ মুকুল হোসেনও একই থানার এএসআই। তাকে উদ্ধারে অভিযান চলছে।
আহতরা হলেন- এক পুলিশ সদস্য, কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছানোয়ার হোসেন ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতে গত ১৩ অক্টোবর থেকে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী ইলিশ ধরা, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা চললেও পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে ইলিশ ধরছেন জেলেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে অভিযোগ করে জানান, তার নৌকা থেকে পাঁচ কেজি ইলিশ নিয়ে নেন ইউপি সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তারা। আগের রাতেও তার নৌকা থেকে আট কেজি ইলিশ নিয়ে যান ওই পুলিশ সদস্যরা। পরপর দুই রাত এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন জেলেরা। সোমবার ভোররাতে কয়েকটি নৌকা থেকে ১৫-২০ জন তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের নৌকা ডুবে এএসআই সদরুল ও এএসআই মুকুল নিখোঁজ হন। আহত হন ইউপি সদস্য মো. সেলিম ও আনোয়ার হোসেন টিটন এবং এক পুলিশ সদস্য। তারা সাঁতরে নদী তীরে আসতে সক্ষম হন।
গত ১৩ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর স্থানীয় ইয়ারুলের নেতৃত্বে প্রতিরাতেই বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরছেন জেলেরা। তুলনামূলক কম মূল্যে গোপনে এসব মাছ বিক্রি করা হয় বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় কুমারখালীর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমাদুল হাসান বলেন, রাতে অভিযান ছিল না। পদ্মায় পুলিশ কেন গেছে তা জানি না।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরতে গিয়েছিলেন ওই পুলিশ সদস্যরা। কীভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে তদন্ত করা হচ্ছে।