পর্যটকদের আগ্রহ বাড়ছে মনপুরার ‘দখিনা হাওয়া’ সি-বিচে

প্রকাশিত: ৪:৩৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

দ্বীপজেলা ভোলার মূল ভূ-খন্ড থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরা। আধ্যাত্মিক সাধক মিয়া জমিরশাহ’র পুণ্যভূমি এই সবুজ জনপদের পুরোটাই যেন একটি পর্যটন নগরী।

উপজেলাটির একাংশে মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলে ঢেউয়ের তোড়ে জেগে ওঠা এক কিলোমিটার দীর্ঘ বালুকাময় সমুদ্রসৈকত হাওয়াই দ্বীপ। এলাকাটির পাশ দিয়ে দীর্ঘ ম্যানগ্রোভ বনে সবুজের সমারোহের পাশাপাশি মায়াবী হরিণের পদচারণা আর অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে বছর জুড়ে।

এ যেন প্রকৃতি আপনমনে সাজিয়েছে। এ এক অপরূপ সৌন্দর্য, যা দেখলে যে কারো দৃষ্টি জুড়িয়ে যাবে। নীল আকাশ আর সাগরের ঢেউয়ের মিলনমেলায় আপনার মনে হবে যেন এ এক অন্য রকম সমুদ্র সৈকত, যা কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটা থেকে ভিন্নতায় সাজানো। যেখানে একসঙ্গে নীল আকাশ, জলরাশি, ম্যানগ্রোভ বন, হরিণ, অতিথি পাখি আর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত যাওয়ার অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করা যায়। বলছিলাম ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার সর্বদক্ষিণে দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুর গ্রামের বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন মেঘনা পাড়ের এক কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত নতুন সমুদ্র সৈকতের কথা। স্থানীয়রা যার নাম দিয়েছে ‘দখিনা হাওয়া সি-বিচ’।

এই ‘দখিনা হাওয়া’ সি-বিচকে ঘিরে মনপুরা দেশের অন্যতম টুরিস্ট স্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিনিয়ত এই টুরিস্ট স্পটে ঘুরতে আসেন হাজারও পর্যটক। সেখানে ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা আবু জাফরের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আমরা শুধু কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সাজেক ও জাফলং নিয়েই পড়ে থাকি। কিন্তু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদী ও সাগর জনপদের আনাচে-কানাচেতে যে অসংখ্য পর্যটন এলাকা পড়ে আছে সেগুলো আবিষ্কারের চিন্তা কারো মাথায় নেই। মনপুরা হাওয়াই সি-বিচ তারই একটি অংশ।

সেখানকার অপরূপ লীলাভূমি দেখে তিনি অত্যন্ত মুগ্ধ। চট্টগ্রাম থেকে স্ব-পরিবারে ঘুরতে আসা অপর পর্যটক আবুল হাসনাত বলেন, বাস্তবে দক্ষিন হাওয়া সি-বিচের মনকাড়া সৌন্দর্য আর হৃদয় নিংড়ানো অপরূপ প্রকৃতির শোভা কেউ ভাষায় বর্ণনা করতে পারবে না।

যেভাবে যাওয়া যাবে
ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকাল ৫টায় এমভি ফারহান ও সাড়ে ৫টায় এমভি তাসরিফ লঞ্চে ডেকে ৩৫০ টাকা ও কেবিনে এক হাজার ২০০ টাকায় সরাসরি মনপুরায় আসতে পারেন। এছাড়া বরিশাল থেকে লঞ্চযোগে ভোলার ভেদুরিয়া হয়ে বাসযোগে তজুমুদ্দিন উপজেলা থেকে সি ট্রাক ঘাট, সেখান থেকে লঞ্চে সন্ধ্যায় মনপুরা। শীত মৌসুমে নদী শান্ত থাকায় অনেকে আবার স্পীড বোটেও যেতে পারেন মনপুরা।

অপরদিকে ভোলার ভেদুরিয়া থেকে বাসযোগে চরফ্যাশন লঞ্চঘাট। সেখান থেকে লঞ্চ করে সরাসরি মনপুরার জনতাঘাট হয়ে দখিনা হাওয়া সি-বিচে যেতে পারে।

পর্যটকদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা
সি-বিচ সংলগ্ন থাকার ব্যবস্থা নেই। তবে মনপুরা উপজেলা শহরে জেলা পরিষদের চারতলা ও দোতলা দুটি ডাক বাংলো এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের রয়েছে একটি ডাক বাংলো। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে আধুনিক আবাসিক হোটেল। মনপুরা সদর থেকে অটোরিকশা ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল করে বিচে যাওয়া যায়। এখানকার খাবার হোটেলে হাঁস, তাজা ইলিশ, রূপসী মাছ, দই পাওয়া যায়। খাবারের দামও কম।

পর্যটন সম্ভাবনা
প্রকৃতির অপার সম্ভাবনার এই দ্বীপটিতে দিনদিন পর্যটকদের আগ্রহকে আরও ত্বরান্বিত করছে। দেশের পর্যটন শিল্পকে লাভবান করতে দক্ষিনাঞ্চলীয় জনপদ মনপুরাকে কার্যকর উন্নয়ন অবকাঠামো বিনির্মাণে সরকারের নজর দেয়া জরুরী বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এখানকার হাওয়াই সি-বিচটিকে একটি সিষ্টেমগত রাষ্ট্রীয় অনুদানে উন্নয়নের পদক্ষেপে নেওয়া হলে এতদাঞ্চলের পর্যটনশিল্প ব্যাপক প্রসার লাভ করবে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

এ বিষয়ে মনপুরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কবি সীমান্ত হেলাল বলেন, বিগত সরকারের জমানায় মনপুরার পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে। তবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর এখানকার পর্যটনখাতকে নিয়ে দ্বীপবাসী নতুন স্বপ্ন দেখছেন।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, ভোলার পর্যটন শিল্পকে নিয়ে সরকারের আগামীর মাষ্টার প্লান ভোলাবাসীকে আনন্দিত করবে।