সিলেট প্রতিনিধি:
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চলমান অবরোধ-হরতালের প্রভাব পড়েছে সিলেটের পর্যটন শিল্পে। চলতি মাসের শুরু থেকেই ধস নেমেছে এ খাতে। ভরা মৌসুমেও পর্যটক না থাকায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে হোটেল মোটেল-রিসোর্টসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থা চলতে থাকলে কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাইরে থেকে একজন পর্যটক সিলেটে আসা-যাওয়ার সঙ্গে ৩২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান জড়িত। এ ৩২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিকশাচালক, অটোচালক, নৌকার মাঝি থেকে হোটেল ব্যবসায়ী সবাই। অবরোধের কারণে সিলেটে পর্যটক আসতে না পারায় প্রতিদিন এই ৩২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থাৎ বড় একটি চেইন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তবে পর্যটন শিল্পে ক্ষয়ক্ষতি ও ব্যবসায়ীদের আশঙ্কার বিষয়টি একেবারে মানতে নারাজ স্থানীয় প্রশাসন। তাদের দাবি, বছরের অন্য সময়ের মতো এখনও স্বাভাবিক রয়েছে পর্যটন খাত। অবরোধ-হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি এ খাতে। সবকিছুই স্বাভাবিক রয়েছে।
প্রকৃতিকন্যা সিলেটে বছরজুড়েই ভ্রমণপিপাসুরা আসেন। তবে শীতের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থানের ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় জমান সিলেটে। ফলে পর্যটকের আনাগোনায় মুখরিত থাকে সিলেটের হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট। রেস্টুরেন্টগুলোতে থাকে উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে পর্যটননির্ভর এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। চলতি মাসের শুরু থেকেই অনেকটা পর্যটকশূন্য সিলেট। ভিড় নেই রেস্টুরেন্টে। জাফলং, সাদাপাথর, বিছানাকান্দি ও রাতারগুলসহ সিলেটের সবকটি পর্যটন স্পট ধুঁকছে পর্যটকের অভাবে। সাদাপাথর, রাতারগুল ও বিছানাকান্দি পর্যটন স্পটের মাঝিরা অলস সময় পার করছেন। অবরোধহীন দিনগুলোতেও একই অবস্থা। পর্যটকদের দিকে চেয়ে দিন কাটাচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পর্যটন স্পট সাদা পাথরের নৌকার মাঝি তোয়াহির মিয়া জানান, অবরোধ শুরুর পর থেকে হাতেগোনা পর্যটক আসছেন সাদা পাথরে। সারাদিনে একজন মাঝি একটি ট্রিপও দিতে পারেন না। অথচ স্বাভাবিক দিনে প্রতিদিন ৮-১০টি ট্রিপ দেন একজন মাঝি।
তিনি বলেন, এবার ভরা মৌসুমে আশা করেছিলাম বাড়তি কিছু আয় করবো। কিন্তু অবরোধের কারণে খেয়ে বাঁচাই কষ্টকর। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তিন-চারশত টাকা রোজগার করা সম্ভব হচ্ছে না। আগামীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।
সাদাপাথর ঘাটের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী আব্দুল আলী বলেন, রেস্টুরেন্ট খোলা আর বন্ধ রাখা সমান। সারাদিন বেচাকেনা করে কর্মচারীর বেতন তোলাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিজের পারিশ্রামিক না হয় বাদই দিলাম। এভাবে আর হবে না। আয়ের বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এবারের অবরোধে সিলেটে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটনখাত।
তিনি বলেন, একজন পর্যটকের সঙ্গে ৩২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান জড়িত। হরতাল-অবরোধের কারণে এই ৩২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত।
তিনি আরও বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকেই সিলেটের বাহিরের কোনো পর্যটক নেই বললেই চলে। এখন বিভিন্ন স্পটে যাদের ঘুরতে দেখা যায় তারা সবাই স্থানীয় পর্যটক। অলস সময় কাটাতে তারা সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যায়। এসব পর্যটকের সঙ্গে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক নেই। সিলেটের পর্যটন শিল্প বাঁচতে হলে বাইরের পর্যটকদের আসার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।
তবে রাজনৈতিক কারণে পর্যটক কমেনি বলে জানান সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কোনো অংশে পর্যটক কম নয়। ব্যবসায়ীরা বলতে পারেন পর্যটক কম। আমাদের কাছে পর্যটক কম মনে হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ট্যুরিজম বিষয়টি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) দেখেন বলে জানান।
তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) এ এস এম কাসেমকে কল দিলে তিনি সাড়া দেননি।