ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস পাঁচ পরিকল্পনায় নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
তাপস আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। তার নির্বাচনী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যের ঢাকা, সচল ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও উন্নত ঢাকা।
এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, মোজাফফর হোসেন পল্টু, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার তাপস বলেন, অপরিকল্পিত ও দূষনে আক্রান্ত নগরী ঢাকাকে পুনরুজ্জীবিত করতে এই পাঁচটি রূপরেখার প্রতিশ্রুতিতে নির্বাচনী ইশতেহার সাজিয়েছেন। তিনি বলেন, র্নিবাচিত হলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকাকে ঐতিহ্য প্রাঙ্গন হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সবাইকে নিয়ে সমন্বিত প্রয়াসে যাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি নির্মাণ ও প্রদর্শনীসহ নগরীর ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থাপনা সংরক্ষণে মহাপরিকল্পনা ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যকে পুনরদ্ধার ও সংরক্ষণ করে ঢাকাকে তার স্বকীয় গৌরবে সাজিয়ে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন।
ভোটে মেয়র নির্বাচিত হলে ঐতিহ্যের ঢাকা ফিরিয়ে আনার কথা জানিয়ে তাপস বলেন,“ চারশত বছরের পুরনো আমাদের এই ঢাকার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাসের উজ্জ্বল ছবি, ঐতিহ্যের গভীর শেকড় ও প্রতœতাত্বিক গুরুত্ব।”
তিনি বলেন, ঢাকায় ক্রমবর্ধমান মানুষের চাপ, যুগের চাহিদা, মানুষের স্বপ্ন ও আকার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রয়েছে কিছু সমস্যা, তৈরি হয়েছে নতুন নতুন চাহিদা। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বিবেচনায় ঢাকা দক্ষিণের সম্ভাবনার দিগন্ত আজ অবারিত।
সব সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করে এগিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ বর্তমান সরকার গ্রহণ করেছে জানিয়ে মেয়র প্রার্থি বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অগ্রসর হওয়া আমাদের জন্য কঠিন কিছু নয়। প্রত্যাশিত ঢাকার নবসূচনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে।’
তিনি বলেন, নির্মাণাধীন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিবাসগুলোর নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন, নতুন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিবাস নির্মাণ ও তাদের নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হবে। খালগুলোর অবৈধ দখল উচ্ছেদ-খনন ও সৌন্দর্যবর্ধণ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক নর্দমা নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, ও জলাধার সংরক্ষণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দৈনন্দিন ভিত্তিতে সড়কের উপর উন্মুক্ত আবর্জনার স্তুপ অপসারণ করা হবে।
তাপস বলেন, সড়ক থাকবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকাটিকে সবুজায়ন, শিশুপার্ক, থিয়েটার হলসহ পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। র্দীঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পাড় ঘিরে বনায়ন, বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনসহ ব্যাপক সৌন্দর্য বর্ধনের মাধ্যেমে সুন্দর ঢাকা গড়ে তুলবেন।
যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপনেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যানজটের কারনে রাস্তায় চলাচল হয়ে উঠেছে দূর্বিসহ। সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে গন্তব্যে পৌছানো ও ফিরে আসতে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়, বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের বিড়ম্বনা অপরিসীম।
তাপস বলেন, ‘গণপরিবহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিছু রাস্তায় দ্রুত গতির যানবাহন, কিছু রাস্তায় ধীর গতির যানবাহন, আবার কিছু রাস্তায় শুধু মানুষ হাঁটার ব্যবস্থা করবো। নদীর পাড়ে থাকবে সুপ্রস্ত রাস্তা, যেখানে পায়ে হেঁটে চলা যাবে, চালানো যাবে সাইকেল, চলবে রিক্সা ও ঘোড়ার গাড়ি। দ্রুতগামী যানবাহনের জন্য থাকবে আলাদা পথ, থাকবে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা। রাস্তা পারাপারের সুব্যবস্থাসহ নগর ঘুরে দেখার জন্য থাকবে ‘হপ অন হপ অফ’ বাস সেবা। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সড়ক বাতি ও উন্নত প্রক্ষালণ কক্ষ হবে। হকারদের তথ্যভান্ডার গঠন করে তাদের পূনর্বাসনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হবে। এভাবে গড়ে তোলা হবে আমাদের সচল ঢাকা।
মাদক নির্মূল, জুয়া, কিশোর অপরাধসহ নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়জনিত বিভিন্ন অপরাধ রোধসহ এলাকাভিত্তিক সুশাসিত ঢাকা গড়ে তুলার কথা জানিয়ে তাপস বলেন, ঢাকায় একসময় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ছিল। মাদক নির্মূল, জুয়া, কিশোর অপরাধসহ নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়জনিত বিভিন্ন অপরাধ রোধসহ এলাকাভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কার্যকর ও সংশোধন কেন্দ্র নির্মাণ করবেন বলে ইশতেহারে উল্লেখ করেন।