পাওনা টাকা চাওয়ায় চোখ উপড়ে পরিবহন কর্মী ফারুককে হত্যা

প্রকাশিত: ১০:০৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২৪

এসএম দেলোয়ার হোসেন:

অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসা করানোর জন্য পাওনা টাকা চাওয়ায় পরিবহন কর্মী ফারুককে বাসা থেকে ডেকে একটি বাসে তুলে নিয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গুরুতর আঘাত করে টুলবক্সের স্ত্রু দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে হত্যাকাÐের মূল পরিকল্পনাকারী মো. নিজাম উদ্দিন (৩৬) এবং তার সহযোগী মো. সোহাগ (৩৮), মো. জহিরুল ইসলাম (৪৮), মো. রনি হোসেন (২৩) ও মো. বাদশা (২৩) নামে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে হত্যাকাÐে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, নিজাম ও ফারুক হোসেন একসঙ্গে টঙ্গীর চেরাগআলী এালাকায় ‘ঢাকা এক্সপ্রেস’ নামক একটি পরিবহনের কাউন্টারে কাজ করতেন। ওই পরিবহন কাউন্টারের টিকিট বিক্রয়কর্মী ছিলেন ফারুক ও কাউন্টার ম্যানেজার ছিলেন নিজাম উদ্দিন। একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে দীর্ঘ ৫/৬ বছরের পরিচয়ের সূত্রে তাদের মধ্যে প্রায়ই আর্থিক লেনদেন হতো। কাউন্টার ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন তার সহকর্মী ফারুকের কাছ থেকে বেশকিছু টাকা ধার নেন। কিন্তু সেই পাওয়া টাকা আর ফেরৎ দেননি। নিজের সন্তান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার খরচের টাকার জন্য নিজামকে তার পাওয়া টাকা ফেরৎ চেয়ে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন ফারুক। এতেই ঘটে বিপত্তি। নিজাম তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরবর্তী সময়ে পরিকল্পনার অংশ অনুযায়ী বাসা থেকে ডেকে এনে ঢাকা এক্সপ্রেসের একটি খালি বাসে ফারুক হোসেনকে তুলে পূর্বাচল ৩০০ ফিট এলাকায় নিয়ে যান। সেখান থেকে ফারুককে বাসে ওঠানোর পর সোহাগ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে গুরুতর আঘাত করেন। এসময় বাদশাহ বাসের টুলবক্স থেকে স্ক্রু ড্রাইভার নিয়ে ফারুকের এক চোখ উপড়ে ফেলে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, এরপর ৩০০ ফিট থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ের পাশে রঘুরামপুর এলাকার রাস্তার পাশে ফারুকের মরদেহ ফেলে বাসটি নিয়ে ল²ীপুরের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যান আসামিরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে তারা আত্মগোপনে চলে যান।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ৮ জানুয়ারি নিজাম উদ্দিনের কাছে ফারুক পাওনা টাকা চাইলে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। ফারুকের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে নিজাম তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য গ্রেফতার সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশাসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭টায় নিজাম মোবাইলে ফোন করে ফারুককে টাকা নেওয়ার জন্য কাউন্টারে আসতে বলেন। ফারুক টাকা নিতে সেখানে গেলে পরিকল্পনা মতো তাকে মারধর করে বাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে হত্যা করে মরদেহ ফেলে পালিয়ে যান আসামিরা। তিনি আরও জানান, গত ৯ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে রাস্তার পাশে একটি চোখ উপড়ানো অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহ দেখে স্থানীয়রা পাশের র‌্যাব ক্যাম্পে খবর দেয়। র‌্যাব-১ প্রাথমিকভাবে মরদেহের সঙ্গে থাকা মানিব্যাগে বিভিন্ন নথিপত্র এবং ওআইভিএস ডিভাইসের মাধ্যমে মরদেহটির নাম ও পরিচয় শনাক্ত করলে পরিচয় নিশ্চিত হয়। পরবর্তী সময়ে নিহতের মা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার দিবাগত রাতে র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর সহায়তায় র‌্যাব-১ এর যৌথ আভিযানিক দল রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুরের টঙ্গী ও ল²ীপুরের রায়পুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পরিবহন কর্মী ফারুক হত্যাকাÐের মূল পরিকল্পনাকারী নিজাম উদ্দিনসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে।