পাওনা টাকা চেয়ে দুবাইয়ে হত্যার শিকার হন শাওন

প্রকাশিত: ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২৪

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

শাওন বেপারি (২৬) ভাগ্য বদলাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই যান বছর তিনেক আগে। শুরুতে অন্য চাকরি করলেও আট মাস আগে শুরু করেন রেস্তোরাঁ ব্যবসা। পাশাপাশি গুদাম ভাড়া নিয়ে রাখির ব্যবসাও শুরু করেন। ওই ব্যবসার পাওনা টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তাঁকে কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও শাওনের লাশ দেশে ফেরেনি। পরিবারের লোকজনের কান্না থামছে না।

শাওন বেপারি মুন্সীগঞ্জ সদরের দক্ষিণ মহাকালী গ্রামের মরহুম আমিন বেপারির ছেলে। ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে দুবাইয়ে হত্যার শিকার হন তিনি। ঘটনার পর থেকে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা ছয়জনকে গ্রেপ্তারে খুঁজছে দুবাই পুলিশ। ইতোমধ্যে স্থানীয় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্তও হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুবাইয়ের গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
শাওনের মামা আলেক মাদবর গতকাল শুক্রবার সমকালকে বলেন, তিন বছর ধরে ‍দুবাই অবস্থান করছিলেন শাওন। প্রথমে চাকরি করলেও আট মাস আগে রেস্তোরাঁর ব্যবসা শুরু করেন। একই সঙ্গে কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে গুদাম ভাড়া নিয়ে রাখির ব্যবসা শুরু করেন। শাওন এ ব্যবসার সহযোগীদের কাছে ১৫ লাখ টাকা পেতেন। ওই টাকার জন্য তাগদা দেওয়ায় সহযোগীদের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। এর জেরে কয়েক মাস আগে শাওনকে মারধর করা হয়।
আলেক মাদবর আরও বলেন, বিরোধ নিরসনে স্থানীয়ভাবে ভিডিওকলে সালিশও হয়। রাখি ব্যবসায় পাওনা বাবদ ১০ লাখের জায়গায় শাওনকে ৮ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া রেস্তোরাঁ ব্যবসায় আরও ৭ লাখ টাকা পেতেন।
তাঁর অভিযোগ, মোট ১৫ লাখ টাকা পাওনা না দেওয়ার জন্য ব্যবসায়িক অংশীদাররা মিথ্যা তথ্য দিয়ে শাওনকে গ্রেপ্তার করায়। তদন্তে নেমে দুবাই পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পায়নি। ১০ দিন কারাগারে থাকার পর ১ নভেম্বর তিনি মুক্ত হন। তিনি দুবাইয়ের ব্যবসা গুটিয়ে ও পাওনা টাকা নিয়ে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
স্বজনরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, শাওনের রাখি ব্যবসার সহযোগী বাংলাদেশিরা টাকা দেওয়ার নাম করে তাঁকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে ৩ নভেম্বর রাতে ৯ জন মিলে তাঁকে হত্যা করে। এ হত্যায় অন্য তিনজনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মুন্সীগঞ্জ সদরের নৈরপুকুরপাড় গ্রামের সহোদর শাহ আলম ও মো. শ্যামল, মদিনাবাজার ডাকাততলা গ্রামের শাহিন মিয়া, আজিমপুরা গ্রামের রতন মিয়া, রাঢ়ীপাড়া গ্রামের মো. শাকিল ও ডেকরাপাড়ার স্বপন মিয়া। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে জানান শাওনের মামা আলেক মাদবর।
শাওনের স্বজনরা জানিয়েছেন, তাদের প্রতিবেশী সাদ্দাম হোসেন দুবাই থাকেন। তাঁর কাছ থেকে জেনেছেন, শাওন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সেখানে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ ঘটনার পর ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
শাওনের মৃত্যুর সংবাদে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী লামিয়া ইসলাম ঊর্মি। পরিবারের অন্য সদস্যদের কান্নাও থামছে না। লামিয়া ইসলাম ঊর্মি স্বামী হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। শাওনের মামা আলেক মাদবর জানিয়েছেন, দুবাইয়ে পাশাপাশি তারা পরিবারের পক্ষ থেকে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলার চেষ্টা করছেন। তবে মরদেহ কবে বাংলাদেশে পাঠানো হবে তা এখনও নিশ্চিত নন।