আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
পাকিস্তানে একই পরিবারের ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৬ জনই শিশু। পারিবারিক বিবাদের জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির খাইবার-পাখতুখাওয়া প্রদেশের লাকি মারওয়াত জেলায়। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার খাইবার-পাখতুখাওয়া প্রদেশের লাকি মারওয়াতের শেখ নিয়াজী কুর্না তখতিখেল এলাকায় নাবালক শিশুসহ একই পরিবারের ১১ সদস্যকে তাদের বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা ডনকে বলেছেন, দুই ভাই, তাদের দুই স্ত্রী এবং তাদের ছয় শিশু সন্তানসহ নিহতদের দুই-তিন দিন আগে বিষপ্রয়োগ ও নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি জানান, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পুলিশ নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, নিহতদের মধ্যে সরদরাজের ছেলে সরদরাজ তাবেদার, তার স্ত্রী সওদানা বিবি, মেয়ে মুজলেফা ও বসরিনা বিবি এবং ছেলে আল্লাহ নূর ও আবদুল রহিম, পাশাপাশি সরদরাজের আরেক ছেলে আমালদার, তার স্ত্রী গুলদানা, ছেলে আমিরুল্লাহ এবং নাইফা ও নূরবানা নামে মেয়েরাও রয়েছেন।
তাবেদারের চাচা উমর গুল (৬৭) পুলিশকে জানান, তিনি তার ভাতিজার বাড়ির কাছে থাকতেন এবং বুধবার সকালে সেখানে গিয়ে তাদের শোবার ঘর বাইরে থেকে তালাবদ্ধ দেখতে পান। তিনি আরও জানান, তাবেদারের ঘরের দরজা ভেঙে স্ত্রী ও সন্তানসহ তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
গুল বলেন, আমালদার ও তার স্ত্রী ও সন্তানদেরও তাদের ঘরে খুন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পরে আমি আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীদের ডেকে লাশগুলো সেরাই নওরাং শহরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করি।’
এই বাসিন্দা বলেন, আমালদারের মেয়ে চামতির বিয়ে হয়েছিল উত্তর ওয়াজিরিস্তান উপজাতীয় জেলার মাদাখেল এলাকার বাসিন্দা সাদ্দার খানের ছেলের সঙ্গে। তিনি বর্তমানে বান্নু জেলার ঘোরিওয়ালা শহরে বসবাস করেন।
তিনি দাবি করেন, কয়েকদিন আগে সাদ্দার খান আমালদার বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সাদ্দার খান এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছেন, কারণ তিনি এবং তার ছেলে চামতি বিবির প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন।’
স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডনকে বলেন, নিহত ১১ জনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। তিনি জানান, জানাজায় গ্রাম ও অন্যান্য এলাকার লোকজন উপস্থিত হওয়ার পর নিহতদের স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পুলিশ দাবি করেছে, তদন্তকারীরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং বাড়ি থেকে ‘প্রমাণ’ সংগ্রহ করেছে। জেলা পুলিশ কর্মকর্তা তারিক হাবিব নিহতের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন।
তিনি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে বৈজ্ঞানিক ধারায় হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। এছাড়া জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার ও পুলিশের কাছে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
তারা এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। একজন বাসিন্দা বলেন, ‘এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অসহনীয়।’
এদিকে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আরশাদ হুসেন শাহ এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রাদেশিক পুলিশের মহাপরিদর্শককে তার কাছে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।