পাগলা মসজিদের দানবাক্সে পাওয়া গেল ২৮ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

প্রকাশিত: ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০২৫

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:

 

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্সে এবার পাওয়া গেছে ২৮ বস্তা টাকা। এর মধ্যে আছে বিদেশি মুদ্রাসহ বেশ কিছু অলংকার এবং প্রচুর চিরকুট।

আজ শনিবার সকাল ৭টায় মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মো. হাছান চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে বাক্সগুলো খোলা হয়।

এরপর বাক্সে পাওয়া টাকাসহ সবকিছু সিনথেটিক বস্তায় ভরে মসজিদের দোতলার মেঝেতে ঢেলে সেগুলো আলাদা করে শুরু করা হয় গণনা। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ৩০ নভেম্বর ১১টি দানবাক্স পাওয়া ২৯ বস্তা টাকা গণনা করে পাওয়া গিয়েছিল গিয়েছিল মোট ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। এরপর সমুদয় টাকা রূপালী ব্যাংকে মসজিদের হিসাবে জমা করা হয়।

পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্সের নূরুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার ৭৫ জন ছাত্র, ৪৫ জন শিক্ষক ও স্টাফ, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার ১৯৪ জন ছাত্র, রূপালী ব্যাংকের ৮০ জন স্টাফ টাকা গণনার কাজে অংশ নিয়েছেন। পুরো কার্যক্রমে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রশাসন ক্যাডারের ২৪ জন কর্মকর্তা, ১৪ জন সেনা সদস্য, ৩০ জন পুলিশ সদস্য ও ৯ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।

 

প্রতি তিন মাস অন্তর দানবাক্স খোলার নিয়ম থাকলেও এবার রমজানের কারণে খোলা হয়েছে চার মাস ১২ দিন পর। দানবাক্সের বাইরেও মানতকারীরা বিভিন্ন জাতের গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, কবুতর, দুধ এবং সবজিও দান করে থাকেন। এগুলো উন্মুক্ত নিলামে বিক্রি করে মসজিদের ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হয়।

দানবাক্স খোলার পর জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, এসব টাকার থেকে দরিদ্র মানুষের বিভিন্ন বিপদে সহায়তা করা হয়। স্টাফদের বেতনসহ এতিম ছাত্রদের সমুদয় খরচ বহন করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ এখান থেকেই মেটানো হয়। মসজিদের কিছু উন্নয়ন কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, টাকা গণনার সময় সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এখানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। দানবাক্স খোলা থেকে সমুদয় টাকা ব্যাংকে জমা করা পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে প্রায় পৌনে দুশ বছর আগে গড়ে ওঠা এই মসজিদে দেশ-বিদেশের নানা ধর্মের মানুষ অনুদান পাঠান। প্রতি জুমার দিন দেশের নানা জেলার প্রচুর মানুষ এখানে নামাজ আদায় করে অনুদান দিয়ে যান। অনেকে মানি অর্ডারের মাধ্যমেও অনুদান পাঠান। এখানে দান করলে মনোবাঞ্ছা পূরণ হয় বলে মানুষের বিশ্বাস। ব্যাংকে জমা রাখা দানের টাকার লভ্যাংশ থেকে মসজিদ কমপ্লেক্সের নানা রকম খরচ মিটিয়ে হতদরিদ্র মানুষদের নানা আপদ বিপদে সহায্যও করা হয়ে থাকে।

জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেছেন, দানবাক্সে পাওয়া টাকা থেকে অসহায় জটিল রোগীদের অনুদান দেওয়া হয়। মসজিদ কমপ্লেক্স মাদ্রাসার ১৩০ জন এতিম ছাত্রের খরচসহ মসজিদ পরিচালনার খরচও মেটানো হয়। জমানো টাকা থেকে পুরুষ ও মহিলাদের নামাজের আরও দুটি শেড নির্মাণ করা হবে। এছাড়া মসজিদ কমপ্লেক্সের সম্প্রসারণের কাজও করা হবে।