পাবনায় হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগী

প্রকাশিত: ২:৫৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি পাবনা

শীতে কাঁপছে পাবনা জেলা শহরসহ পদ্মা-যমুনা তীরবর্তী অঞ্চল। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) পাবনায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের কারণে টানা চারদিন ধরে বন্ধ রয়েছে ১৬৬৪টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস।

এদিকে এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশা এবং হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে মোট ১৪ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। ঠান্ডাজনিত রোগে মোট ১১৫ শিশু ভর্তি রয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ২২ শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহে ৫ শতাধিক মানুষ ঠান্ডাজনিত রোগে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে শিশু এবং বৃদ্ধ বয়সের মানুষ বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা ও যমুনা নদী তীরবর্তী পাবনায় গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে শীতের দাপট। কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে প্রকৃতি। কখনো হচ্ছে কুয়াশা বৃষ্টি। মাঝে মধ্যে সূর্যের দেখা মিললেও তা যেন উত্তাপহীন।

পাবনার ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ৮- ৯ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে। আজ বুধবার (২৪ জানুয়ারি) তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে মঙ্গলবার ৮ ডিগ্রি, সোমবার ৯.২ ডিগ্রি আর রোববার তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গত রোববার (২১ জানুয়ারি) থেকে আজ বুধবার (২৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত টানা ৪ দিন জেলার ১ হাজার ৬৬৪টি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ রয়েছে।

পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা জানান, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষের পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত জেলার ১ হাজার ১৩৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

একইসঙ্গে জেলা শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালী স্বাক্ষরিত পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে থেকেও জানানো হয়, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় জেলার ৫২৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিদুল ইসলাম  জানান, পাবনা জেনারেল হাসপাতালে শীতজনিত রোগী ভর্তি বাড়লেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের চাপ বেড়েছে বলে সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানিয়েছে।

অপরদিকে প্রচণ্ড শীতে চরাঞ্চলের বাসিন্দা ও শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন মহাবিপাকে। তারা ঠিকমতো কাজে যেতে পারছেন না। চরাঞ্চলের অসংখ্য শিক্ষার্থীকে নদী পাড়ি দিয়ে আসতে হয় স্কুল-কলেজে। কিন্তু এই শীতে তারা ঠিকমতো আসতে পারছে না। এছাড়া চরাঞ্চলসহ শীতার্ত মানুষের মধ্যে গরম কাপড়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসনের ত্রাণ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানান, পাবনার পদ্মা ও যমুনা নদীর চরাঞ্চলের ২ লাখসহ জেলায় কমপক্ষে ৫ লাখ শীতার্ত মানুষের গরম কাপড় দরকার। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৫ হাজার কম্বল দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন থেকে যে কম্বল দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।

বেড়া উপজেলার পুরাণ ভারেঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এএম রফিক উল্লাহ বলেন, তার ইউনিয়নে কমপক্ষে ৭ হাজার কম্বল দরকার। কিন্তু দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫০টি কম্বল।

পাবনা জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান জানান, জেলায় এখন পর্যন্ত শীতার্তদের মধ্যে ৪৫ হাজার কম্বল দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শীতবস্ত্র নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। স্বাভাবিক কাজকর্ম কিছুটা ব্যাহত হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।