পারিবারিক সম্পত্তি আত্মসাৎ করে দলীয় কার্যালয় বানানোর অভিযোগ

প্রকাশিত: ৭:৩৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) বিরুদ্ধে ভাই-বোনের পারিবারিক সম্পত্তিকে দখলপূর্বক দলীয় কার্যালয় হিসেবে দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন তার ভাই সৈয়দ সহিদ উদ্দিন আহমদ ও বোন সৈয়দা সায়েমা আহমদ ও সৈয়দা সাহেদা আহমদ। তারা দলটিকে নিবন্ধন না দেওয়ার দাবিও জানান।
বিএসপির দলীয় কার্যালয় হিসেবে দেখানো পারিবারিক ওই সম্পত্তি নিয়ে মামলা চলছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।


এর আগে বিএসপিকে নিবন্ধন না দেওয়ার দাবিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলমের বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বিএসপি চেয়ারম্যানের ছোট ভাই সৈয়দ সহিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ভুয়া ও মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় নিয়ে বিএসপি চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারি পারিবারিক সম্পত্তি সন্ত্রাসের মাধ্যমে জোরপূর্বক দখল করে রাজনৈতিক কার্যালয় স্থাপন করেছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি নামে যে দলটা নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছে, ওই দলের বিষয়ে অভিযোগ থাকলে তা দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
সৈয়দ সহিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের অভিযোগ হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, কুমিল্লা এবং অন্যান্য জায়গায় যে কার্যালয়গুলো দেখিয়েছে, এগুলো সবগুলো আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি। এখানে আমরা আমাদের পরিবার, বিবি-বাচ্চা নিয়ে বসবাস করি। আসলে হীন উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের পারিবারিক সম্পত্তিগুলো চূড়ান্তভাবে আত্মসাত করা। ওই সম্পত্তিগুলো নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। উনি মামলাগুলো বিভিন্ন কৌশলে অপশক্তির মাধ্যমে দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি করে আমাদের সম্পত্তিগুলো আত্মসাৎ করেন। আমরা দুই ভাই দুই বোন। কিন্তু উনি আমার বড় ভাই হিসেবে আমি এবং ছোট দুই বোনের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার কু মানসিকতায় নির্বাচন কার্যালয় বানিয়েছে আমাদের পারিবারিক সম্পত্তির ওপর। নিবন্ধনের নাম করে পারিবারিক সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন বিএসপি চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের প্রতি আকুল আবেদন- বিএসপির রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি। যার কাছে পরিবার-পরিজন, নিজের ছোট ভাই-বোনরা নিরাপদ নয়, তার কাছে দেশবাসী কি করে নিরাপদ থাকবে। এজন্য বিএসপি নামের ভুঁইফোড় দলের নিবন্ধন যেন না দেওয়া হয়- এ দাবি জানাচ্ছি। বিএসপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন ভূমিদস্যু। ছয়টা গানম্যান নিয়ে চলে। ওই বন্দুক দিয়ে প্রতিনিয়ত ভয় দেখিয়ে চলছে। চট্টগ্রাম ও ঢাকার বাড়িতেও মাস্তান বাহিনী নিয়ে মহড়া চালায়। আমাদের পরিবার, আমার বিবি-বাচ্চাদের ওপর সন্ত্রাসী মহড়া চালায়।
একজন সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু, প্রতারক, জালিম এবং এই ঠকবাজ লোক কীভাবে জাতীয় নির্বাচন করে, কেমন তদন্ত করে তার দলকে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধনের জন্য মনোনীত করা হলো- এটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার কাছে নিজের পরিবার-পরিজন নিরাপদ নয়। যিনি আমার পিতা সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমেদ মাইজভান্ডারি থেকে সমুদয় সম্পত্তি উনি জুলুম করে, প্রতারণার মাধ্যমে হেবা দলিল সম্পাদন করেন যাতে পরিবারের বা এলাকার গন্যমান্য কাহারো কোন স্বাক্ষী নাই।
আমার বাবার সমুদয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে আমাদের পৈত্রিক ও মাত্রিক সম্পত্তির কোনো হিস্যা না দিয়ে একদম জুলুমভাবে অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন করে যাচ্ছে। একজন সন্ত্রাসী, ঠকবাজ, জুলুমবাজ কি করে একটা পার্টির নেতৃত্ব দিতে পারে। এতে আমাদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে, দেশবাসী ক্ষতির মুখে পড়বে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওনার (বিএসপি চেয়ারম্যান) তো কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডই নাই। ওনার কর্মকাণ্ড হলো কীভাবে ভাই বোনদের ঠকাবে, এই হীন উদ্দেশ্যে উনি এই দল করেছেন। বিএসপির নামও শুনিনি কখনো। হঠাৎ নির্বাচন কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তি দেখে এবং টিভিতে প্রেস ব্রিফিং দেখে জানতে পেরেছি। এরপর আমাদের পারিবারিক সম্পত্তিতে দলীয় কার্যালয়ের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হলো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব জায়গায় আমাদের খানকা শরিফ আছে। সেগুলোই তিনি কার্যালয় হিসেবে দেখিয়েছেন। কীভাবে, কোন আইনে ছয়টা গানম্যান নিয়ে বিএসপি চেয়ারম্যান চলাচল করেন- তা খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানান তিনি।
বিএসপির সাইফুদ্দিন যদি এলাকায় মেম্বার নির্বাচন করে তাও ফেল করবে এবং মেম্বার হওয়ার যোগ্যতাও তার নাই বলেও মন্তব্য করেন সৈয়দ সহিদ উদ্দিন মাইজভান্ডারি।
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ সহিদ উদ্দিন মাইজভান্ডারি ও তার দুই বোন ছাড়াও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর প্রেসক্লাবের সামনে একই দাবিতে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ওই মানববন্ধন থেকেও বিএসপিকে নিবন্ধন না দেওয়ার দাবি তোলেন মাইজভান্ডারের ভক্ত ও আশেকানরা।