
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলায় পাহাড়ের ঢালে এবং পাহাড়ের পাদদেশে বিপজ্জনকভাবে বসত ঘর তৈরি করে অনেকেই বসতি গড়ে তুলেছেন। নতুন নতুন স্থানে পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ চলছেই। অনেকে এমন বিপজ্জনক স্থানে ঘর নির্মাণ করছেন যা দেখলেই ভয়ে শরীর হিম হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। অনেকে পাহাড়ের ঢালে গাছ বাঁশ দিয়ে তিন তলা সমান ঘর নির্মাণ করছেন। এসব ঘরের একটি খুঁটি যদি কোনো রকমে ভেঙে পড়ে, তাহলে পুরো ঘরটাই ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে ২০০ ফুট গভীর খাদে পড়বে। কিন্তু যারা ঘর নির্মাণ করছেন তারা কোনো আশঙ্কা মাথায় না নিয়েই পাহাড়ের ঢালে বসত ঘর নির্মাণ করছেন।
সরেজমিন কাপ্তাই, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাউখালী, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাসহ প্রায় প্রতিটি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাহাড়ের ঢালে বিপজ্জনকভাবে ঘর নির্মাণ করতে দেখা গেছে। কোনো কোনো পরিবার পাহাড়ের গভীর খাদে ঘর নির্মাণ করে বসতি গড়ে তুলেছেন। কোনোভাবে পাহাড় ধস হলে পুরো মাটি ঐ ঘরের ওপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু কেউ কোনে তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছামত যেখানে সেখানে ঘর নির্মাণ করছেন।
কাপ্তাইয়ে অবস্থিত বনশ্রী পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য প্রকৌশলী রুবায়েত আক্তার আহমেদ বলেন, যেখানে সেখানে বিপজ্জনকভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণের ফলে শুধু যে ঝুঁকি বাড়ছে বিষয়টা এমন নয়। এসব ঘরবাড়ি নির্মাণের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যও নষ্ট হচ্ছে। এই অবস্থা থামানো খুব জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
৫নং ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিরনজিত তনচংগ্যা বলেন, বিপজ্জনক স্থানে ঘরবাড়ি তৈরির ফল আমরা ২০১৮ সালের ১৩ জুন দেখেছি। সেদিন লাগাতার ভারী বৃষ্টির ফলে পাহাড় ধসে কাপ্তাই উপজেলায় ১২৮ জন মানুষ মৃত্যু বরণ করেছিলেন। সেই ভয়াবহ স্মৃতি মানুষ কিন্তু এখনো ভুলে যায়নি।
মানিকছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী পলব চাকমা বলেন, ২০১৯ সালে ভারীর বৃষ্টির সময় মানিক ছড়িতে পাহাড় ধসে একটি পরিবার মাটির নিচে চাপা পড়েছিল। তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে রাঙ্গামাটি সেনাবাহিনীর ৫জন সদস্য মাটি চাপা পড়ে নির্মমভাবে মৃত্যু বরণ করেছিলেন। অপরিকল্পিত ভাবে বিপজ্জনক স্থানে ঘরবাড়ি নির্মাণের ফলে প্রায় প্রতি বছর এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাদের দেখতে হয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সদস্য ক্যাওসিমং মারমা বলেন, পাহাড়ে বসবাসকারি নিম্ন আয়ের মানুষই এরকম বিপজ্জনক স্থানে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছেন। রাঙ্গামাটি জেলার আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বিষয়ে একাধিকবার আলোচনা হলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আসন্ন বর্ষা মউসুম শুরু হওয়ার আগেই জেলা প্রশাসনের তরফে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি আহবান জানান।
এ ব্যাপারে রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, পাহাড় কাটা এবং পাহাড়ে অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। পাহাড়ের ঢাল বা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ না করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবসময় প্রচারণা চালানো হয়ে থাকে। তার পরও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অস্থায়ীভাবে বসতঘর নির্মাণ করা হয়ে থাকতে পারে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে জনস্বার্থে এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।