পুলিশি হয়রানিতে ঘরছাড়া হোসেনপুরের যুবকরা

প্রকাশিত: ১২:৫৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪

চাঁদপুর প্রতিনিধি

পুলিশ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন চাঁদপুরের হোসেনপুরবাসী। ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার নির্দোষ যুবকদের গ্রেফতার করায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা অবিলম্বে, পুলিশের এই হয়রানি বন্ধের পাশাপাশি অভিযুক্ত ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

ফয়সাল হোসেন সজিব। সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এলাকায় এসেছিলেন। এক ডাকাতির ঘটনায় এই যুবককে পুলিশের তথাকথিত মামলায় অভিযুক্ত হয়ে এখন থানাহাজতে দিন কাটাতে হচ্ছে।ফয়সালের মা রশিদা বেগম বলেন, পরিবারের উপার্জনক্ষম বড় ছেলে ফয়সাল। হঠাৎ করেই তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। সে নাকি ডাকাতি করেছে। নির্দোষ ছেলের মুক্তির পাশাপাশি অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

ফয়সালের স্ত্রী জানান, গভীর রাতে দরজা ভেঙে পুলিশ ঘরে ঢোকে। আমার স্বামীকে জোরজবরদস্তি করে নির্যাতন করে। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা নেই। তারপরও কেন পুলিশ তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ আমাকে ও আমার সন্তানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে করে আমার ছেলের বাম হাত ভেঙে যায়।

ফয়সালের বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার ছেলেকে নেওয়ার পর দুইদিন থানায় আটকে রাখে। আমাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা চেয়েছে, দিতে পারিনি বলে ছেলের নামে ডাকাতির মামলা দিয়েছে।শুধু ফয়সাল হোসেন সজিবের পরিবার নয়, পুরো হোসেনপুরবাসী পুলিশি এই হয়রানির প্রতিবাদে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এলাকার তরুণ সমাজ, ব্যবসায়ীসহ নানান পেশার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি নির্দোষ যুবকদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার হোসেনপুর বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন ধরেই তারা পুলিশের হয়রানির শিকার। মামলায় নাম বা অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও নানা হুমকি-ধামকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে পুলিশ। তা না হলে এলাকাবাসীকে হয়রানির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ স্থানীয় যুবকদের।

স্থানীয় যুবক হানিফ আহমেদ বলেন, আমরা যারা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী কিংবা বিভিন্ন কাজে জড়িত, তারা এখনো পুলিশের হয়রানির কারণে ঘরছাড়া। হঠাৎ করেই রাতে পুলিশ এসে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়। যারা টাকা দেয়, তাদেরকে ছেড়ে দেয়।

জেলা কারাগার থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া যুবক স্বপন বলেন, আমাকে বিনা কারণে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পরে চুরি-ডাকাতির মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। দীর্ঘদিন জেল খেটে মুক্তি পেয়েছি। বিনা কারণে জেলে যেতে হয়েছে। আমরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।এদিকে যেই ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী পুলিশি হয়রানির শিকার, সেই মামলার বাদী সীমা রানী বলছেন, তিনি থানায় কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেননি।

এ বিষয়ে শাহরাস্তি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন জানান, ডাকাতির মামলা আছে বলেই ফয়সালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এজন্য তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে নির্দিষ্ট কোন মামলা কিংবা অভিযোগ রয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে তার সঠিক কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।