পুলিশ হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ পুলিশ সদর দপ্তরের

প্রকাশিত: ১২:২৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০২৪

আফরিন আক্তারঃ 

সারা দেশে পুলিশ হত্যা সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে সদর দপ্তর। সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত এক সভায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। সভায় বলা হয়েছে, পুলিশ হত্যার যে মামলাগুলো বিচারাধীন রয়েছে, সে সব মামলার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে সাজা নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিচার কাজের জন্য আদালতে প্রতি ১৫ দিন পরপর তারিখ নির্ধারণের ব্যবস্থা করতে হবে। নাশকতা ও পুলিশ হত্যা মামলায় সাজা নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮০ সাল থেকে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত ১১০ জন পুলিশ সদস্য হত্যা সংক্রান্তে মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ২১টি মামলায় সাজা, ২০টি মামলায় খালাস, ৫টি মামলা স্থগিত, ৫৮টি মামলা বিচারাধীন ও ছয়টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।সভায় পুলিশের অ্যাডিশনাল আইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনা ছিল— পুলিশ হত্যার বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার। পুলিশ হত্যার যে মামলাগুলো বিচারাধীন আছে, সেসব মামলা দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে সাজা নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুলিশ হত্যার প্রত্যেকটি মামলা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিটে আলোচনা করতে হবে।’

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত পুলিশ সপ্তাহেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন পুলিশ হত্যা মামলাগুলোর যেন দ্রুত রায় হয়— সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা দেন।সংশ্লিষ্টরা জানান, বিচারাধীন মামলাগুলোর বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। যেসব মামলা সাক্ষীর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সাক্ষী হাজির করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশে যে পাঁচটি মামলা স্থগিত হয়ে আছে, সেগুলোর স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, সর্বশেষ গত বছরের ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলার সময় কর্তব্যরত অবস্থায় একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় একাধিক আসামি গ্রেফতার করা হলেও এখনও মূল আসামিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিম। গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আতিকুল ইসলাম জানান, সন্দেহভাজন হিসেবে অনেক আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। সরাসরি পিটিয়ে হত্যা করা আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৭ জুলাই পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তৎকালীন পরিদর্শক মামুন এমরান খানকে বনানীতে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল ডিবি পুলিশ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যায় অভিযোগপত্রে থাকা পলাতক আসামিদের একজন দুবাইয়ে বসবাসরত আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম। বছরখানেক আগে আরাভ খানের আমন্ত্রণে দেশের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দুবাইয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপর পুলিশ হত্যা মামলার আসামি আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু গত এক বছরে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলে চিঠি দেওয়া ছাড়া আর কোনও অগ্রগতি নেই।

পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, পুলিশ হত্যা মামলার আসামি আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে গেছে। আরাভ খানের সঙ্গে দেশের প্রভাবশালী একটি মহলের যোগাযোগ রয়েছে বলে তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অন্যান্য সংস্থাগুলোর অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, আরাভকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তারা অনেক দূর এগিয়েছেন।