জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
১০ বছর আগেও শরীয়তপুরে পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হয় চাষিদের। অনেকে তাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন এ চাষ থেকে। তবে কয়েক বছর ধরে বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আবাদ বাড়িয়েছেন তারা। পাঁচ বছরে এ অঞ্চলে এক হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ বেড়েছে। একইসঙ্গে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলা হওয়ায় এ অঞ্চলের মাটি পেঁয়াজ চাষের উপযোগী। বেলে দোআঁশ মাটিতে উৎপাদনও বেশ ভালো। তবে বাজারে দীর্ঘ সময় পেঁয়াজের তেমন ভালো দাম পাওয়া যায়নি। এতে খরচ তোলাই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে গত পাঁচ বছর ধরে বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর থেকে জেলায় পেঁয়াজের আবাদ বেড়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ছয়টি উপজেলায় ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে জেলার তিন হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। এসময় উৎপাদন হয়েছিল ৩৭ হাজার ৬৪৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। পরের বছর তিন হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ৪৩ হাজার ৩৬৫ মেট্রিক টন। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে তিন হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের উৎপাদন দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৯২ মেট্রিক টনে। পরবর্তী বছরে চার হাজার ৭১ হেক্টরে পেঁয়াজের উৎপাদন হয় ৪৫ হাজার ২৬৮ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে চার হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন।
কৃষকরা জানান, অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয়ে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেন তারা। পেঁয়াজ আবাদ করতে কৃষাণ খরচ, বীজ, সার, সেচসহ প্রতি মণে উৎপাদন খরচ হয় প্রায় এক হাজার ৪০০ টাকা। বর্তমানে বাজারে নতুন পেঁয়াজের দাম ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা।
নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের পুটিয়াকান্দি এলাকার কৃষক সুভাষ মাঝি। তিনি এবছর তার দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত বাজারে পেঁয়াজের ভালো দাম থাকায় অন্তত এক লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
সুভাষ মাঝি বলেন, পাঁচ বছর আগে বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিলো না। এজন্য আমি পেঁয়াজ বাদ দিয়ে অন্য ফসলের চাষ করেছি। তবে কয়েকবছর ধরে বাজারে পেঁয়াজের দাম আবার বেড়ে যায়। এরপর থেকে আবার পেঁয়াজ চাষ শুরু করি। এখন আমাদের ভালো লাভ হয়।
একই এলাকার পেঁয়াজ চাষি জয়দেব মণ্ডল বলেন, মৌসুমের প্রথম দিকে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই আমরা বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পরই জমিতে পেঁয়াজ চাষ শুরু করি। এতে আমাদের উৎপাদন খরচ কম হয়। কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হয়েছি।
জাজিরা টিঅ্যান্ডটি মোড় এলাকার জসীম ঢালী নামের আরেক চাষি বলেন, পেঁয়াজ চাষ থেকে দুইভাবে টাকা আসে। প্রথম ধাপে কলি বিক্রি করি, পরে আবার পেঁয়াজ বিক্রি করি। এছাড়া একই জমিতে পেঁয়াজ ওঠানোর পর গম চাষ করা হবে। সবমিলিয়ে কয়েকবছর ধরে ভালো লাভ হচ্ছে।
জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, গত কয়েকবছর ধরে বাজারদর ভালো থাকায় আমাদের চাষিরা পেঁয়াজ আবাদের দিকে মনোযোগী হয়েছেন। জেলায় এখন চাহিদার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর বাকি পেঁয়াজ আশপাশের জেলায় বিক্রি করা হয়। উৎপাদন বৃদ্ধি করতে আমরা সবসময় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।