পটুয়াখালীত প্রতিনিধি: চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় মো. জাহাঙ্গীর ফকির (৩৮) নামে এক যুবকের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। রাজাধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঁচ দিন চিকিৎসার পর বুধবার রাত ১০টায় তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর আগে পৌর এলাকার সমতা সড়কের শাহিন গাজীর ছেলে সাকিব গাজীকে (২২) অভিযুক্ত করে একটি ভিডিও বক্তব্য দিয়েছেন জাহাঙ্গীর। এ ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ালে অভিযুক্ত সাকিবকে গ্রেফতারের দাবি উঠেছে নানা মহলে।
দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নের চরগরবদি গ্রামের জয়নাল ফকিরের ছেলে নিহত জাহাঙ্গীর। তিনি দীর্ঘ দিন পৌর এলাকার ফায়ার সার্ভিস রোডের শিকদার রেস্টহাউসে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করতেন।
এ ঘটনায় মামলা হলেও অভিযুক্ত সাকিব গাজীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
নিহত জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই জামাল ফকির বলেন, গত ২ জুন স্থানীয় শাহিন গাজীর ছেলে সাকিব গাজী তার ভাই জাহাঙ্গীরের কাছে টাকা দাবি করেন। এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সাকিব তার ভাই জাহাঙ্গীরের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় জাহাঙ্গীর চিৎকার করলে স্থানীয় এগিয়ে এসে দগ্ধ জাহাঙ্গীরকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন; কিন্তু জাহাঙ্গীরের শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেলে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রেরণ করেন। এরপর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বুধবার রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জাহাঙ্গীর। এ ঘটনায় ৬ জুন পটুয়াখালী সদর থানায় একটি মামলা করেন জামাল।
ওই মামলায় উল্লেখ করা হয়, সাকিবকে রেস্টহাউস কক্ষের চাবি না দেয়ার কারণে জাহাঙ্গীরের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ জাহাঙ্গীরের নিজ মুখে দেওয়া ভিডিও বক্তব্যে শোনা গেছে, সাকিব তার কাছে প্রায়ই টাকা দাবি করতেন। ঘটনার দিনও টাকা দাবি করেছিলেন। টাকা না দেওয়ার কারণে স্থান ত্যাগ করে আবার কিছুক্ষণ পরে পেট্রল নিয়ে হাজির হন। এরপর জাহাঙ্গীরের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন সাকিব।
এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই জামাল ৬ জুন পটুয়াখালী সদর থানা মামলা করতে যান। ওসির কক্ষে উপস্থিত হয়ে জাহাঙ্গীরের দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী ঘটনার বর্ণনা দেন জামাল। অথচ মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সাকিব জাহাঙ্গীরের কাছে রেস্টহাউস কক্ষের চাবি চেয়েছিলেন। চাবি না দেওয়ার কারণে সাকিব এ কাণ্ড ঘটায়।
জামাল আরও বলেন, তার শুধু স্বাক্ষর জ্ঞান আছে, পুলিশ যা লিখেছে তাতে জামাল শুধু স্বাক্ষর করেছেন।
এ প্রসঙ্গে সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, অভিযোগকারী যেভাবে বলেছেন সেভাবেই মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত করছি, তদন্তে যা পাওয়া যাবে সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আসামি গ্রেফতার হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, এখনো গ্রেফতার হয়নি, গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
শিকদার রেস্টহাউসের মালিক মাসুম শিকদার বলেন, সাকিব বিগত দিন থেকেই জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে টাকা নিত।
স্থানীয়রা বলেন, অভিযুক্ত সাকিব গাজী বিগত দিনে টাকা ও মোবাইল ছিনতাইসহ একাধিক অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। পরিবারের আশকারায় সাকিব বেপরোয়া হয়ে গেছে।