জেলা প্রতিনিধি,ময়মনসিংহঃ
‘দাম বাড়লে এক মিনিটে কার্যকর হয়, সরকার দাম কমাইলে এক মাসেও বাস্তবায়ন হয় না। নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়তি নেয়। আমরা পেডের লাইগ্যা ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি অইয়্যা গেছি। দাম কমার কথা কইলে সরকারে কাছে বাজার করিবার কয়। ব্যবসায়ীরা সরকারকে মানে না– এই হইল আমার দেশ।’
গত শনিবার দুপুরে হালুয়াঘাট উপজেলার শাকুয়াই কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে কথাগুলো বলেন কৃষক সুভাষ ঘোষ। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি চাওয়ায় আক্ষেপ করেন শাকুয়াই গ্রামের এই কৃষক।সুভাষ ঘোষের পাশে থাকা এনজিওকর্মী মৌসুমী আক্তার বলেন, ‘ভাই, সরকার ২৯টা পণ্যের দর নির্ধারণ করে দিছে। কিন্তু দোকানদাররা তা মানছে না। সরকারি মূল্যতালিকার চেয়ে অনেক বেশি দাম চাচ্ছে। এক কেজি শুকনা মরিচের সরকারি দর ৩২৮ টাকা হলেও দোকানদার নিল ৫০০ টাকা, ১২১ টাকার রসুন চাচ্ছে ১৬০ টাকা। শুধু মরিচ-রসুন না, এখানে সবকিছুর দাম অনেক বেশি।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ে আক্ষেপ শুধু কৃষক সুভাষ ঘোষ ও এনজিওকর্মী মৌসুমী আক্তারের নয়; হালুয়াঘাটের হাজারো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। রমজান মাসে ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে হালুয়াঘাটের বাজারে বাস্তবায়ন হয়নি সরকার নির্ধারিত মূল্যতালিকা। নিত্যপণ্যের বেঁধে দেওয়া দরের থেকে অনেক বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে অধিকাংশ পণ্য।
গত শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত হালুয়াঘাট পৌর বাজার, ধারা বাজার, শাকুয়াই বাজার, নাগলা বাজার ঘুরে দেখা যায়– অধিকাংশ দোকানে নেই মূল্যতালিকা। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে নিত্যপণ্য।অন্তত ১০ জন ব্যবসায়ী ও ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি দর হিসেবে শুকনা মরিচের কেজি ৩২৮ টাকা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। ১২১ টাকার দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২৪০ টাকায়। ১৮১ টাকার আদা ২০০ টাকা, ১৬৫ টাকা ৪১ পয়সার মুগডাল ১৮০ টাকা, ১৩১ টাকার মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ৯৮ টাকা ৩০ পয়সার ছোলাবুট ১১০ টাকা, ১০ টাকা ৪৯ পয়সার ডিম ১২ টাকা, ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সার ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা, ২৬২ টাকার সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা, ১৮০ টাকা ৮৭ পয়সার পাঙাশ ২২০ টাকা, ৬৬৪ টাকার গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, ১ হাজার ৩ টাকা ৫৬ পয়সার খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৬০ টাকা, শিম ৬০, বেগুন ৪০, সজিনা ১৮০, টমেটো ৩৫, মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কথা হয় পৌর বাজারের নিয়মিত ক্রেতা আকনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শামসুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছা ছাড়া কম দামে কখনোই পণ্য পাওয়া যাবে না। যতই প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের লোকজন অভিযান চালাক। বরং তারা অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা আরও পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। স্বল্প আয়ের মানুষ কীভাবে সংসার চালাচ্ছেন, একমাত্র ওপরওয়ালাই জানেন।
একই বাজারের ক্রেতা সুমন মিয়া জানান, রমজান মাসে যে লেবু পানি দিয়ে তৃষ্ণা মেটাবেন, তার উপায়ও নেই। এক সপ্তাহ আগে যে লেবু দু-তিন টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, তা এখন ১০ টাকা। রোজার মাস যেন জিনিসপত্রের দাম বাড়ার প্রতিযোগিতার মাস।দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে কথা হয় হালুয়াঘাট পৌর বাজারের ব্যবসায়ী এমদাদুল হকের সঙ্গে।তিনি বলেন, ‘আমাদের পণ্যগুলো আগে কেনা। এগুলোর কেনা দাম বেশি থাকায় বর্তমান সরকারি দামের থেকে একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে। নতুন দরে মালপত্র কিনলে সরকারি দরে বিক্রি করতে পারব।’
ধারা বাজারে গিয়ে দেখা গেল মাছের দামও চড়া। ক্রেতার সমাগমও কম। এ বিষয়ে মাছ ব্যবসায়ী হাবি মিয়া জানান, মাছের আড়ত থেকে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। কম দামে কিনলে কাস্টমারের কাছে কম দামেই বিক্রি করতে পারতাম। দাম বেশি হওয়ায় আগের থেকে কাস্টমারও কম।বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হয় হালুয়াঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোছা. জিনিয়া জামানের সঙ্গে।তিনি বলেন, ‘ক্রেতারা যাতে ন্যায্য দামে পণ্য কিনতে পারেন, সে বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিদিনই বাজার মনিটর করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হচ্ছে। যারা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’