সানজিদা মাহবুবা:
গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের দিনভর বিক্ষোভের মুখে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করতে বাধ্য হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের প্রক্রিয়া শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘অপমানজনক’ বলছেন অনেকেই। ইতিমধ্যে আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাদের সংগঠন ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতি’।
গত বুধবার (১ জানুয়ারি) শিক্ষক ও কর্মকর্তার সন্তানদের জন্য বরাদ্দকৃত পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল এবং কেবল সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। কিন্তু এতে অসন্তোষ প্রকাশ করে রাতেই সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসন ভবন তালা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।
এরপর গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় দুই উপ-উপাচার্যসহ প্রায় ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশাসনিক ভবনের আটকে রাত ১০টা পর্যন্ত তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। দিনভর তাদের আটকে রাখা হয়। পরে রাতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পর উপাচার্য ঘোষণা করেন,‘পোষ্য কোটা থাকছে না। একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি বিলুপ্ত হবে।’ এ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা ভবনের তালা খুলে দিয়ে আনন্দ মিছিল করেন।
এদিকে, পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল জানান, ‘পোষ্য কোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে যে কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দাবি মানতে বাধ্য করা হলো, প্রশাসনের একজন হিসেবে এই অপমান-অপদস্থকে আমি মেনে নিতে পারছি না। আমি এর প্রতিবাদে আইসিটি পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানান, পোষ্য কোটা বহালের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। আগের মতো ৫ শতাংশ পোষ্য পুনর্বহাল না করলে আগামী ৬ জানুয়ারি মানববন্ধন, ৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে ২ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি এবং ৮ জানুয়ারি সারাদিন কর্মবিরতি কর্মসূচি ডাক দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতি।
এ বিষয়ে সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, তারা তাদের দাবি তুলতে পারে। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে আমরা চাই তাদের কোটার পরিবর্তে দিয়ে অন্য ভাতা বা সুবিধা দেওয়া হোক। এখন সকল বিশ্ববিদ্যালয় এই পোষ্য কোটার বিষয়ে সরব হয়ে উঠেছে।
আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের পদত্যাগ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্যার যদি মনে করেন পদত্যাগ করবেন, করতে পারেন। তিনি আমার ব্যক্তিগত ডকুমেন্টস পাবলিক করেছেন।’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে আলাপ আলোচনার বিকল্প নেই। বিষয়টি সমাধানে আমরা উভয়পক্ষের সঙ্গেই কথা বলব। আইসিটির পরিচালককে পদত্যাগ না করার বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি। এখন যা হবে সেটা মোকাবিলা করতে হবে। আমি চাই না শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ হোক।’