প্যারিসে ‘ড. নুরুন নবী আজীবন মুক্তিযোদ্ধা’র প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ১১:১১ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১, ২০২৪

ফ্রান্স প্রতিনিধি:

একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিজ্ঞানী ড. নূরুন নবীর বর্ণাঢ্য এবং সংগ্রামমুখর জীবনকর্ম নিয়ে নাদিম ইকবাল নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রামাণ্যচিত্র ‘ড. নুরুন নবী আজীবন মুক্তিযোদ্ধা’র প্রদর্শনী হয়েছে প্যারিসে।
রোববার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যা সাতটায় সাহিত্যের ছোটোকাগজ ‘স্রোত’-এর আয়োজনে প্যারিসের লু ব্রাডি সিনেমা হলে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির উপস্থিতিতে এর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী শেষে ‘স্রোত’ সম্পাদক কবি বদরুজ্জামান জামানের সঞ্চালনায় শুরু হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা।অংশ নেন অনুষ্ঠানের মধ্যমনি ড. নুরুন নবী, মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত হোসেন, অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন (আয়েবা) মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহ, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা আমীরুল আরহাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসনাত জাহান প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন কবি-লেখক সাহিত্যিক, বাংলা ইলেকট্রিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক, বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিজ্ঞানী ড. নূরুন নবী তাকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ২৫ মার্চ কালরাতে প্রতিবাদী ছাত্রদের মিছিলে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যারিকেড সৃষ্টি করতে গিয়ে আহত হন এবং কিছুদিন পর আহত অবস্থাতেই টাঙ্গাইল চলে যান।

তিনি জানান, সুস্থ হওয়ার পরপরই ছাত্র, কৃষক ও মজুরসহ সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করে যোগ দেন টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকীর ‘কাদেরিয়া বাহিনীতে’। মুক্তিযুদ্ধে তার দায়িত্ব ছিল যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ এবং ভারতের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ ও বহন করে নিয়ে আসা। তিনি যমুনা নদী দিয়ে নৌকায় অস্ত্র নিয়ে আসতেন।

নূরুন নবী যুদ্ধ পরিকল্পনা ও বার্তাবাহকের কাজে অভিজ্ঞ ছিলেন। তিনি সম্মুখ যুদ্ধ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় কমান্ডারদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। তিনি ভারতীয় সীমান্ত পার হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের জোগান দিতেন এবং ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর যখন ভারতীয় ছত্রীসেনা টাঙ্গাইলে অবতরণ করে, তখন নূরুন নবী অর্কেস্ট্রাবাদক দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন।
১৯৭২ সালের ৬ মে ‘ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ’ সাময়িকী মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য জন্য তাকে টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া বাহিনীর ‘দ্য ব্রেইন’ বলে উল্লেখ করে।প্রামাণ্যচিত্রটিতে মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের ফুটেজও ব্যবহৃত হয়েছে। সেই সঙ্গে ড. নূরুন নবীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যারা জানেন, এমন বিশিষ্টজনদের সাক্ষাৎকার ও মন্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে।প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর পৃষ্ঠপোষক কাজী এনায়েত উল্লাহ বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সম্পদ, জাতির গর্বিত সন্তান। আমাদের এই প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানো দরকার। ড. নুরুন নবী আজীবন মুক্তিযোদ্ধা প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে সঠিক ইতিহাস জানানো সম্ভব।

অনুষ্ঠানে সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড এবং ধ্বংসযজ্ঞের বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়। কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবে স্ব স্ব ধর্মরীতিতে তাদের আত্মার শান্তি প্রার্থনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।