সাজ্জাদ হোসেনঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ বেশ পুরোনো। যদিও কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদান প্রক্রিয়ায় কিছুটা ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লেগেছে। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রক্রিয়ায় ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগলেও ত্বরান্বিত হয়নি প্রশাসনিক ভবনের সেবা প্রদান প্রক্রিয়া। এখনো মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে পারেন না প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ডিজিটালাইজেশন হওয়ায় শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট সেবাগুলোর মধ্যে শুধু বৃত্তি প্রাপ্তদের ও পরীক্ষার ফরম ফিলাপে শিক্ষার্থীদের সেবা গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভোগান্তি কমেছে। তবে মার্কশিট, সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনসহ অন্যান্য কাজে এখনো ভোগান্তি কমেনি শিক্ষার্থীদের। এসব সেবা গ্রহণে এখনো নানা ভোগান্তির শিকার হন তারা।
প্রশাসনিক ভবন সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে যথাক্রমে ৫৪০ ও ৬১৮টি ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের আবেদন পড়ে। তারমধ্যে ঐ সময়ে যথাক্রমে ১৪০ ও ৩৫৪টি ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলন করতে পারেন শিক্ষার্থীরা। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে যথাক্রমে ২২৪২ ও ১৭৮১টি সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে আবেদন করেন শিক্ষার্থীরা। তার মধ্যে ঐ সময়ে যথাক্রমে ১৫৫৫ ও ১১৭৪টি সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে পারেন তারা। আর নভেম্বরে মার্কশিট উত্তোলন আবেদন পড়ে ৭৬১টি তার মধ্য নভেম্বরে মাত্র একটি মার্কশিট উত্তোলন করতে পারেন শিক্ষার্থীরা।
নিয়ম অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে ট্রান্সক্রিপ্ট/মার্কশীট/ সার্টিফিকেট উত্তোলনের জন্য অতিরিক্ত ফি জমা দিতে হয়। আবেদন-পরবর্তী পাঁচ-সাত কর্মদিবসের মধ্যে সেবা পাওয়ার কথা শিক্ষার্থীদের। তবে জরুরি সেবার ফি দিয়েও নির্দিষ্ট সময়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। মেহেদী হাসান হৃদয় নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে মূল ট্রান্সক্রিপ্টের জন্য গত ২৯ নভেম্বরে আবেদন করি। কিন্তু প্রায় এক মাস পরে আমি ট্রান্সক্রিপ্ট হাতে পাই। ডিসেম্বরের ১২ তারিখ এক্সপেক্টেড ডেলিভারির তারিখ ছিল। নিয়ম অনুযায়ী আমাকে ড্রাফট দেওয়ার কথা থাকলেও তারিখ পেরিয়ে গেলেও তা অনলাইনে দেয়নি। এরপর অফিসে যোগাযোগ করলে এখন আর ড্রাফট দেওয়া হয় না বলে তারা জানান। তখন আমি বলি আপনাদের নিয়ম আমি ফলো করছিলাম। আপনারা যে ড্রাফট কপি এখন দেন না তা আমি কীভাবে বুঝব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনিক ভবনের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসলে এ সংকট কাটবে। অনেক কর্মকর্তা কাজের প্রতি গুরুত্ব দেন না, ঠিক টাইমে অফিসে আসেন না।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, কোথায় শিক্ষার্থীরা কোন সেবা পাবে তা আমরা সিটিজেন চার্টারের মাধ্যমে নির্ধারণ করেছি। পাশাপাশি পুরোপুরি অটোমেশনের দিকে যাচ্ছি আমরা। অটোমেশন আর স্বচ্ছতা একটি আরেকটির পরিপূরক। বিভিন্ন কারণে আমরা এখনো ই-নথি চালু করতে পারিনি। আমরা ইতিমধ্যে ই-নথি বাস্তবায়নের জন্য অর্গানোগ্রাম ফাইনাল করেছি। ই-নথির মাধ্যমে আমরা দেখতে পারব কে কার সেবাটি ঠিকঠাক দিচ্ছে না। কে ফাইল কতদিন তার কাছে আটকে রেখেছে তার সবই আমরা জানতে পারব। কর্মকর্তারা ঠিকঠাক সেবা না দিলে আমরা তাদের চিহ্নিত করতে পারব। ই-নথি ফাইনাল করতে পারলেই আমাদের সেবার মান বৃদ্ধি পাবে, বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অল্প সময়ে মানসম্মত সেবা নিতে পারবে।