
খুলনা প্রতিনিধি:
জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও খুলনায় ঈদকে কেন্দ্র করে জনসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করেছেন বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। খুলনার ৬টি সংসদীয় আসনে আগাম প্রচারে ব্যস্ত থেকেছেন জামায়াত নেতারা। রমজানজুড়ে ও ঈদে প্রতিটি আসনে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা সক্রিয় ছিলেন।
বিএনপি নেতারা ব্যস্ত ছিলেন মূলত খুলনা-৩ ও ৪ আসনকে কেন্দ্র করে। কয়েকটি আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঈদে এলাকায় যাননি। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির তৎপরতাও তেমন চোখে পড়েনি। দলটির সংগঠকরা ওয়ার্ড পর্যায়ে কিছু পরিচিতি সভা করেছেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনে ৫৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তাদের বেশির ভাগই ছিলেন আওয়ামী লীগের। জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দলের নেতারাও প্রার্থী হন। তাদের কেউই এখন মাঠে নেই। ওই নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারা এখন সক্রিয়।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি খুলনার ৬টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করে জামায়াত। পুরো রমজান মাস ও ঈদের সময় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা এলাকায় তৎপর ছিলেন। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা না আসায় বিএনপির সব নেতা এলাকায় সক্রিয় ছিলেন না। খুলনা-২ ও ৬ আসনে বিএনপির বর্তমান কমিটির কাউকে নির্বাচন নিয়ে জনসংযোগ করতে দেখা যায়নি। এলাকায় তাদের পক্ষে ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টার-ফেস্টুনও ছিল না। ঈদের পর দিন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমেদের পক্ষে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা হয়। অন্য প্রার্থীদের তৎপরতা ছিল কম।
হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত খুলনা-১ আসনে বিগত সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতারা জয়ী হন। এ আসনে অতীতে নির্বাচনে অংশ নেওয়া জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমির এজাজ খান তৎপর রয়েছেন।
নানা বিতর্কে আহ্বায়ক পদ হারিয়ে তিনি কিছুটা চাপে থাকলেও ঈদকেন্দ্রিক নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় ছিলেন। আসনটিতে নতুন করে তৎপর হয়েছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা জিয়াউর রহমান পাপুল। এ আসনে বটিয়াঘাটা উপজেলা আমির শেখ আবু ইউসুফকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। তিনি এলাকায় সক্রিয় ছিলেন। এদিকে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ভীম্পাল্লি ডেভিড রাজু প্রার্থী হবেন শোনা গেলেও ঈদে তিনি এলাকায় যাননি। নির্বাচনী এলাকায় তাঁর পক্ষে তৎপরতাও চোখে পড়েনি।
খুলনা-২ আসনে অতীতে নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। পদ হারিয়ে তিনিও চাপে রয়েছেন। রমজান ও ঈদের সময় নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় ছিলেন তিনি। এ আসনে বিএনপির সাবেক এমপি আলী আসগার লবী রমজানে ইফতার এবং ঈদে পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। ঈদে তিনি এলাকায় যাননি। আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে অন্য কাউকে প্রচার চালাতে দেখা যায়নি। কারও শুভেচ্ছা পোস্টার কিংবা ফেস্টুন চোখে পড়েনি।
তবে জনসংযোগে এগিয়ে রয়েছেন জামায়াতের প্রার্থী শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল। নগরীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলিতে ঈদ শুভেচ্ছার ফেস্টুন দেখা যাচ্ছে। ঈদের দিন ও পরদিন বিভিন্ন মসজিদে তাঁর পক্ষে ঈদ শুভেচ্ছার লিফলেট বিতরণ করা হয়। এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন তিনি।
খুলনা-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের প্রার্থিতা অনেকটা চূড়ান্ত বলে মনে করেন নেতারা। রোজা ও ঈদে এলাকায় সক্রিয় ছিলেন বকুল। তাঁর পক্ষে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা ইফতার, খাদ্যসামগ্রী ও পোশাক বিতরণ করেছেন। ঈদের আগ থেকে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত সময় কেটেছে তাঁর। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মহানগর আমির মাহফুজুর রহমান। তিনিও গণসংযোগ, মতবিনিময়, পথসভার মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন।
খুলনা-৪ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলালকে একক প্রার্থী হিসেবে দেখছেন নেতাকর্মীরা। রমজানের শুরু থেকে তাঁর পক্ষে ইফতারি বিতরণ, উপজেলা ও ইউনিয়নে সভা-সমাবেশ হচ্ছে। ওমরাহ পালনে এবারের ঈদে তিনি সৌদি আরবে ছিলেন। গত ৩ এপ্রিল দেশে ফিরে এলাকায় প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা কবিরুল ইসলাম এলাকায় প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। তাঁর পক্ষে এলাকায় ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টার, ফেস্টুন দেখা যাচ্ছে।
খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার অনেক আগে থেকে প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। আসনটিতে প্রার্থী হতে প্রচার চালাচ্ছেন জেলা যুবদলের সভাপতি ইবাদুল হক রুবায়েত। তিনি এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
খুলনা-৬ আসনে বিএনপির একক কোনো প্রার্থীর তৎপরতা নেই। আসনটিতে প্রচারণায় এগিয়ে জামায়াতের খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। এলাকায় অন্য কারও পোস্টার-ফেস্টুন চোখে পড়েনি। সম্প্রতি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম কাগজী সক্রিয় হয়েছেন।
খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, নির্বাচনে তৎপরতার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। এজন্য দলগতভাবে তাদের কোনো তৎপরতা নেই। যারা প্রচার চালাচ্ছেন ব্যক্তিগতভাবে তা করছেন।
খুলনা জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ইমরান হোসাইন বলেন, দলের সিদ্ধান্তেই নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। সব আসনেই কর্মীরা তাদের পক্ষে কাজ করছেন। জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক আহম্মেদ হামিম রাহাত বলেন, খুলনায় এনসিপির কমিটি হয়নি। কেন্দ্রের নির্দেশে তারা বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করছেন।