প্রতিটি সহিংসতা ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: আইজিপি

প্রকাশিত: ৬:০৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম:
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, বিএনপির ডাকা সমাবেশ ও তার পরবর্তী সময়ে ঘটা প্রতিটি সহিংসতা ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ বুধবার (১ নভেম্বর) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গত ২৮ অক্টোবরে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, সাংবাদিক বন্ধুরা পুলিশ বাহিনীর মতো মাঠে দায়িত্ব পালন করেন। আপনারা নিজের জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করেন। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের মতো আপনারাও আক্রমণের শিকার হয়েছেন। দুষ্কৃতিকারীরা চায় না আপনারা যে ছবি, তথ্য সংগ্রহ করেছেন, সেগুলো তাদের বিপক্ষে যায়…, এমন আশঙ্কায় তারা সাংবাদিক বন্ধুদের উপরও আক্রমণ করেছে। আমরা প্রতিটি সহিসংতা ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।


২৮ অক্টোবর যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে তার পেছনে ক্ষমতাসীনদের যোগসাজশ রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে। পুলিশের তদন্তে এমন কিছু পাওয়া গেছে কি না? জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আপনারা নিজেরাই দেখেছেন আমরা কীভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের ওপর কীভাবে আক্রমণ চালানো হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশটি যেন সম্পন্ন হয় আমরা সেজন্য দায়িত্ব পালন করছিলাম। আমরা আক্রান্ত হওয়ার পরও যখন মাননীয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়, তখন আমরা তাদের নেতাদের খবর দিয়েছি যেন তারা শান্ত হয়, তাদের নিয়ন্ত্রণ করে। তারা সেটা করেইনি, বরং আক্রমণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। এতে আমাদের একজন সদস্য মারা গিয়েছে এবং অনেকেই আহত হয়েছেন।


আইজিপি বলেন, আমাদের একজন পুলিশ সদস্যকে মাথায় কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও আমাদের বেশ কিছু পুলিশ ও আনসারের সদস্য হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। একজন সদস্যকে দেখলাম, কী হবে জানি না। আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়ে তাকে সুস্থ করার চেষ্টায় আছি। আশা খুব একটা আছে কি না আমি জানি না। এখানকার চিকিৎসকরা যেভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিচ্ছেন, তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি।
তিনি বলেন, গতকালও নারায়ণগঞ্জে আহত এক পুলিশ সদস্য এখানে ভর্তি হয়েছে। একজন আনসার সদস্য মানসিক ভারসাম্যহীনভাবে কাতরাচ্ছে। তাদের বলেছি, এসব ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা যা নেওয়ার আমরা তা নেবো।


২৮ অক্টোবর পুলিশের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল কি না এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরাপত্তার অবনতি হওয়ার কোনো শঙ্কা রয়েছে কি-না, এক্ষেত্রে পুলিশের প্রস্তুতি কেমন এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আমাদের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না। ঘাটতি ছিল না বলেই আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। যখন তারা উচ্ছৃংখল আচরণ শুরু করেছে। বুঝিয়ে-শুনিয়ে চেয়েছি তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে। প্রথমে তারা হঠাৎ একটি বাসে আগুন দিয়েছে। এরপর কিছু মানুষ গাড়ি নিয়ে আসছিল। তাদের ওপর আক্রমণ করেছে। সেদিন তো কোনো অবরোধ কর্মসূচি ছিল না। রাস্তা বন্ধ থাকবে তেমন কোনো কর্মসূচি ছিল না। তারপরে তারা আমাদের লোকদের, সাধারণ মানুষকে আক্রমণ করেছে। গাড়িতে আগুন জ্বালিয়েছে। গাড়িতে যখন আগুন জ্বালায় তখন পুলিশের দায়িত্ব কি? সরকারি ও ব্যক্তিগত জানমালের যখন ক্ষতি হয়, তখন সেটি প্রতিহত করা এবং ব্যবস্থা নেওয়া, সেটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সে দায়িত্ব পালন করেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যেটুকু ব্যবস্থা নেওয়া ও শক্তি প্রয়োগ করা দরকার, সেটুকু করেছি। এর অতিরিক্ত আমরা করিনি।
অবরোধের সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এখনো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কর্মসূচি পালন করার অধিকার আছে। কিন্তু একজন মানুষের অধিকার আছে তার রাস্তায় চলাফেরা করার। এটাকে যারা বাধাগ্রস্ত করবে তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সে ব্যবস্থা আমরা নিবো।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান সরোওয়ার্দী ও জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টার নির্বাচনের আগে কী পরিকল্পনা ছিল, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ঘটনার বিষয়ে যাদের জড়িত পাচ্ছি তাদের বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। গোয়েন্দা তথ্য যেগুলো পাচ্ছি তা বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে সব তথ্য বলছি না। কিন্তু সব কিছু বিবেচনায় রেখে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।


এ সময় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজিপি আবু হাসান মুহম্মদ তারিক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমানসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।