জেলা প্রতিনিধি,বগুড়াঃ
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শুধু বগুড়া জেলাতেই নয়, পুরো উত্তরবঙ্গ জুড়েই রয়েছে। বগুড়ার পাশের জেলা নওগাঁয় রয়েছে অনেক প্রত্ননিদর্শন। তেমনি একটি নিদর্শন নওগাঁর মান্দা উপজেলার ঐতিহাসিক কুসুম্বা শাহী মসজিদ। মুসলিম স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন এই শাহী মসজিদ।
মূল প্রবেশপথে শিলালিপি থেকে প্রমাণিত হয় এই মসজিদটি ৯৬৬ হিজরি বা ১৫৫৮ খ্রিষ্টাব্দের। শেরশাহের বংশধর আফগান সুলতান প্রথম গিয়াস উদ্দীন বাহাদুরের শাসনামলের। সে হিসাবে মসজিদটির বর্তমান বয়স ৪৬৫ বছর। এই পুরাকীর্তি পুরোটাই পাথরে মোড়ানো। দেওয়াল, মিনার এবং গম্বুজে নকশা খোদাই করা। অপরূপ সৌন্দর্যের এই মসজিদটি মুসল্লিদের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত আকৃষ্ট করছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। পাঁচ টাকার কাগজের নোটে মুদ্রিত এ মসজিদটিকে ঘিরে দেশে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা।
কুসুম্বা মসজিদ বাংলা চালাঘরের মতো উত্তর-দক্ষিণে ঈষৎ বত্রু। মসজিদ সংলগ্ন উত্তর-দক্ষিণে রয়েছে ৭৭ বিঘা বিশিষ্ট একটি বিশাল দীঘি। দীঘিটি লম্বায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ফুট ও চওড়ায় প্রায় ৯০০ ফুট। গ্রামবাসী এবং মুসল্লিদের খাওয়ার পানি, গোসল ও ওজুর প্রয়োজন মেটানোর জন্য এই দীঘিটি খনন করা হয়েছিল। এই দীঘির পাড়েই নির্মাণ করা হয়েছে কুসুম্বা মসজিদ। কুসুম্বা মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ৫৮ ফুট লম্বা, ৪২ ফুট চওড়া। চারদিকের দেওয়াল ৬ ফুট পুরু। তার ওপর বাইরের অংশ পাথর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
মসজিদের সন্মুখভাগে রয়েছে তিনটি দরজা। আকারে দুইটি বড়, অন্যটি অপেক্ষাকৃত ছোট। দরজাগুলো খিলানযুক্ত মেহরাব আকৃতির। মসজিদের চার কোনায় রয়েছে চারটি মিনার। মিনারগুলো মসজিদের দেওয়াল পর্যন্ত উঁচু ও আট কোনাকার। ছাদের ওপর রয়েছে মোট ছয়টি গুম্বুজ, যা দুইটি সারিতে তৈরি। মসজিদের ভেতর পশ্চিমের দেওয়ালে তিনটি মেহরাবের ওপর ঝুলন্ত শিকল, ফুল ও লতা-পাতার কারুকাজ করা। এ কারুকার্যগুলো খুব উন্নতমানের। দ্বিতীয় সারির গম্বুজগুলো আকৃতির দিক দিয়ে ছোট। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে তিনটি গম্বুজ নষ্ট হয়েছিল। পরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটি সংস্কার করে। বর্তমানে কুসুম্বা শাহী মসজিদে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।
মসজিদের সন্মুখভাগে রয়েছে খোলা প্রাঙ্গণ ও পাথর বসানো সিঁড়ি। যা দীঘিতে গিয়ে নেমেছে। মসজিদের প্রবেশ পথের কিছুটা দূরে বাক্স আকৃতির একখণ্ড কালো পাথর দেখা যায়। এটিকে অনেকে কবর বলে মনে করেন। জানা যায়, জনৈক কৃষক হাল চাষের সময় তার জমিতে পাথরটির সন্ধান পায়। সম্ভবত তার প্রচেষ্টায় পাথরটি জমি থেকে তুলে এনে রাস্তার পাশে রাখা হয়েছিল।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় কুসুম্বা শাহী মসজিদের দেখাশোনা করেন পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান ফজলুল করিম। তিনি বলেন, কুসুম্বা মসজিদ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। যেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে ভিড় বেশি হয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, সুলতানি আমলের ঐতিহাসিক এ নিদর্শন দেখতে দূরদূরান্ত থেকে যারা আসেন, তাদের থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের রেস্ট হাউজে স্বল্প খরচে পর্যটকরা থাকতে পারেন।