প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ: নিম্ন আয়ের মানুষের কী হবে?
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষেরা। তাদের আশঙ্কা, নিম্ন আয়ের মানুষ সরকারের প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হবেন, সব শ্রেণির মানুষ এই প্যাকেজের সুবিধা পাবেন না।
রাজধানীর কাওরানবাজারে দা, বঁটি বানান কামার নাসির উদ্দিন। প্রতি মাসে তার আয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। করোনার কারণে এখন ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছেন তিনি। নাসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ। করোনার প্রকোপে ঘরে বসে আছি। মাসে আমার আয় ১৫ হাজার টাকার মতো। এই টাকায় কোনও রকমে দিন চালাই। সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই। দিন আনি দিন খাই। আমাদের জন্য এই প্যাকেজে কী সুবিধা থাকবে তা আমরা জানি না।
রাজধানীতে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন (পাঠাও) করেন ২২ বছরের যুবক সোহেল রানা। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করতেন তিনি। করোনাভাইরাসের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ২৬ মার্চ থেকে বেকার হয়ে ঘরে বসে আছেন তিনি। জমানো পুঁজিও শেষ। এখন চলছেন ধার-দেনা করে। এ অবস্থা আরও কতদিন চলবে তা তিনি জানেন না। প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজের কথা শুনলেও ততটা আশাবাদী নন তিনি।
সোহেল রানা বলেন, আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। আমরা কীভাবে সরকারের এই প্যাকেজের সুবিধা পাবো? সরকার কীভাবে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের এই প্যাকেজের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করবে তা জানি না। ১০ টাকা কেজি দরের চাল লাইন দিয়ে আনতে গেলে দিন শেষ। আর শুধু চাল দিয়ে কি জীবন বাঁচে?
রাজধানীর কোনাপাড়া বাজারে বেসরকারি পরিত্যক্ত স্থানে হোটেল ব্যবসা করতেন তোফাজ্জেল হোসেন। বাসা থেকে ভাত-তরকারি রান্না করে হোটেল চালাতেন তিনি। রিকশাচালক, ভ্যানচালক, অটোচালকরাই তার কাস্টমার। মাসে মোটামুটি ২০ হাজার টাকার মতো আয় তার। করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় তার হোটেল ব্যবসাও বন্ধ। কবে নাগাদ সব স্বাভাবিক হবে জানে না কেউই। সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে তোফাজ্জেল বলেন, সরকার যেসব নিম্ন আয়ের মানুষের কথা বলেছেন, তার মধ্যে তো আমরাও আছি। আমরা তো করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা কীভাবে সরকারের এই প্যাকেজের সুবিধা পাবো?
রাজধানী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিম নগরের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করে গামছা-লুঙ্গি বিক্রি করেন। তিনি বলেন, সারাদেশে আমাদের মতো হকারের সংখ্যা অনেক। আমার মাসে আয় ১৫ হাজার টাকার মতো। করোনার কারণে কোথাও বের হতে পারছি না। পুঁজি ভেঙে খাচ্ছি। এভাবে কতদিন? আমাদের পুঁজিও তো কম। সবকিছু যখন স্বাভাবিক হবে, তখন যে ব্যবসা করবো সেই পুঁজি কোথায় পাবো? আমাদের কেউ ঋণও দেয় না। সরকারের সহায়তা পাওয়ার রাস্তাও তো জানি না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজটি পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। কারণ, এর নীতিমালা করা হয়নি। নীতিমালাটি চূড়ান্ত করতে আরও অনেক কাজ বাকি। নীতিমালা পুরোপুরি তৈরি হওয়ার পর এর সুবিধা-অসুবিধা বলা যাবে। তবে সমাজের বিভিন্ন ক্যাটাগরির নিম্ন আয়ের মানুষ রয়েছেন। শতভাগ মানুষকে এই প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধায় আনা আসলেই কঠিন কাজ।
উল্লেখ্য, সরকারের প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজে নিম্ন আয়ের মানুষের বিবরণের বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। এটি চূড়ান্ত করা হবে নীতিমালায়। এ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও অর্থ সচিব রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, সরকারের এই প্যাকেজের আওতায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত সব খাতই উপকৃত হবে, প্যাকেজের আওতায় আসবে। তবে নীতিমালায় বিস্তারিত বর্ণনা থাকবে। কাজেই বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা নীতিমালাটি প্রস্তুত করা পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করার পরামর্শ তাদের।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশের সব মানুষ- কামার, কুমার, তাঁতি, জেলে, কৃষক, শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যে যেখানেই কাজ করেন, তারা সবাই উপকৃত হবেন। আমার বিশ্বাস দেশের মানুষ আশাহত হবেন না। আমরা যেভাবে এগোচ্ছিলাম, আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবো। কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প, মাঝারি শিল্প, তারাও উপকৃত হবেন। বাংলার প্রত্যেকটা মানুষকে প্যাকেজের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত চারটি প্যাকেজের আওতায় সমাজের সবাইকেই নিয়ে আসা হয়েছে। বৃহৎ শিল্পের সঙ্গে ক্ষুদ্র শিল্প যাতে এক হয়ে না যায় তাই প্যাকেজ আলাদা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্যাকেজে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যখন বিস্তারিত নীতিমালা প্রণয়ন করবে, অর্থ বিভাগ তার সঙ্গে কাজ করবে। সংশ্লিষ্ট শিল্পের যে সংগঠনগুলো আছে তাদের সঙ্গে আলাপ করে বিস্তারিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে, যাতে সুষ্ঠুভাবে প্যাকেজগুলো বাস্তবায়ন করা যায়।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ ও সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোসহ ৫টি কার্যক্রম নিয়ে রবিবার (৫ এপ্রিল) কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাৎক্ষণিক, স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি পর্যায়ে এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সূত্র- বাংলাট্রিবিউন।