প্রযুক্তিভিত্তিক দেশ গঠনে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত প্রধানমন্ত্রীর
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রযুক্তি নির্ভর জাতি গঠনে তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুণর্ব্যক্ত করে বলেছেন, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যখন বিশ্ব প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বর্তমান যুগটাই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। তখন বাংলাদেশ পেছন থাকবে তা হতে পারেনা।’
‘মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা সবসময় এগিয়ে থাকতে চাই, পিছিয়ে নয়। আর সেই চিন্তা-চেতনা থেকেই আমরা বিভিন্œ পদক্ষেপ নিয়েছি। যার সুফল এখন দেশবাসী পাচ্ছেন,’যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহীতে শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
তিনি আজ সকালে রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কে শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন।
দেশের ৬৪টি জেলায় সরকারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ এবং আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এই কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের নতুন প্রজন্ম যারা তাদেরকে এমনভাবে শিক্ষিত করতে চাই যেন প্রতিযোগিতাময় বিশ্বের সঙ্গে তারা তাল মিলিয়ে চলতে পারে। সেজন্য প্রযুক্তি শিক্ষাটা একান্তভাবে দরকার।’
তিনি বলেন,‘আমাদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বা কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র প্রয়োজন। যে কারণে আমরা বাংলাদেশের প্রায় সব ক্ষেত্র যেগুলো আগে সরকারি ছিল সেগুলো বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিই, যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।’
প্রযুক্তির ব্যাপকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তিনির্ভর একটা জাতি-গোষ্ঠী গড়ে তুলতে চাই। আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন আরও বেশি আগ্রহী হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কম্পিউটার শিক্ষা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করে দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের এসব পদক্ষেপের পেছনে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এগুলো শুধু নিজেদের শিক্ষার জন্যই নয়, রপ্তানি খাতেও ডিজিটাল ডিভাইস অনেক বেশি অবদান রাখতে পারে। আমাদের ছেলেমেয়েরাও ঘরে বসে বসে শিখে শুধুমাত্র অনলাইনে এখন আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারছে। সেই সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করেছি।’
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় দেশে মোবাইল ফোনের উচ্চমূল্যের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী একে বেসরকারী খাতে উন্মুক্ত করে দেয়ায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৬ সালে আমরা যখন আসি আমরা দেখেছি এদেশে একটা মোবাইল ফোনের দাম ছিল এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। ফোন করলে প্রতি মিনিট ১০ টাকা, ধরলেও ১০ করলেও ১০। এই ছিল অবস্থা।
তিনি বলেন,এখন কম্পিটিশনের যুগে খুব অল্পতেই ব্যবহার করা যায়। আমাদের ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৩ কোটি সিম ব্যবহার হয়।
সরকার প্রধান আরো বলেন,এই যে আমরা কথা বলতে পারছি বা আজকে টাকা পাঠানো, ক্রয়-বিক্রয় থেকে শুরু করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা মানুষ পাচ্ছে। মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে। অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছু যে হচ্ছে তার ফলে আমরা মনে করি যে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণেরও সুযোগ হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিও আরও শক্তিশালী হচ্ছে। একেবারে গ্রাম পর্যায়ের মানুষ যেন কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় সেই ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিচ্ছি।”
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৭২ হাজার বর্গফুটের এই আইটি ইনকিউবেটর কেন্দ্রে বহুমুখী প্রশিক্ষণ, উচ্চমানের স্টার্ট-আপস, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুবিধা রয়েছে। একইসঙ্গে দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণে এখানে সব ধরনের ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।
‘শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে তরুণ-যুবকেরা ট্রেনিং নেবে, এর ফলে দেশে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে, তারা নিজেরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।’
চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উদ্যোক্তা হতে হবে। চাকরি না করে চাকরি দেবো এই চিন্তাটা থাকতে হবে।’
অবহেলিত রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজশাহীর লোক ভোট দিচ্ছে অন্য জায়গায়, কিন্তু রাজশাহীর লোক সুবিধা পাচ্ছে যখন আমরা ক্ষমতায় আসি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে। যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।’
একই অনুষ্ঠান থেকে শেখ হাসিনা সাতটি জেলা ও ২৩টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং ফেনী ১১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।
শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতার সাতটি জেলা হলো- ঢাকা, ফেনী, গোপালগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, জয়পুরহাট এবং মেহেরপুর।
শতভাগ বিদ্যুতায়নের ২৩টি উপজেলা হলো- বাগেরহাট সদর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নাসিরনগর, মেহেরপুরের আলমডাঙ্গা, কুমিল্লার দেবীদ্বার এবং মনোহরগঞ্জ, দিনাজপুরের খানসামা, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, যশোরের সদর ও মণিরামপুর, খুলনার তেরখাদা, কুষ্টিয়ার মিরপুর, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও জুড়ী, নওগাঁর বাদলগাছী ও পতœীতলা, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, নীলফামারীর জলঢাকা, শেরপুরের নকলা ও ঝিনাইগাতী, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল এবং সুনামগঞ্জের ছাতক।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এম তাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, আইসিটি বিভাগ প্রতিমন্ত্রী মো. জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, একেএম রহমতউল্লাহ এমপি, শহীদুজ্জামান সরকার এমপি এবং সংশ্লিষ্ট সচিবরা গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সেক্রেটারি এএনএম জিয়াউল আলম অনুষ্ঠানে শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ হাই-টেক পার্কগুলোর উন্নয়নের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের ওপর পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন।
বর্তমানে দেশের ৯৬ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৬৪টা জেলা আমাদের। সেখানে ৪০টা জেলায় এখন শতভাগ বিদ্যুৎ হয়ে গেল। ৪১০টা উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ আমরা দিতে পারলাম।’
শেখ হাসিনা বলেন,‘দেশের একটি ঘরও আর অন্ধকারে থাকবে না। ইনশাআল্লাহ এই মুজিববর্ষে আমরা বাংলাদেশের সকল ঘরে আলো জ্বালব। এ লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব প্রকল্পের উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং পরে একটি পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে সারাদেশে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের মাসব্যাপী নাট্যোৎসবের উদ্বোধন করেন।