সাজ্জাদ হোসেন:
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়া বা অন্য কোনো কারণে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত সম্ভব না হলে তা সকাল ৮টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে হবে। ইতোমধ্যেই বৈরী আবহাওয়ার কারণে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মুসুল্লিদের ঈদের জামাত আাদায় নির্বিঘ্ন করতে চান্দিনার ওপর ত্রিপল জড়িয়ে সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ঢাকার তেজগাঁও রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব ড. মাওলানা মুশতাক আহমেদ। বিকল্প ইমাম হিসেবে রাখা হয়েছে ঢাকার মিরপুরের জামেয়া আরাবিয়ার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামানকে। জাতীয় ঈদগাহে মূল ক্বারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ বেতারের সিনিয়র ক্বারী মো. এমদাদুল ইসলাম। বিকল্প ক্বারী হিসেবে রাখা হয়েছে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মো. ইসহাককে। মূল উপস্থাপক হিসেবে থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক উপ-পরিচালক এস এম সালাহ উদ্দীন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে জানা গেছে, জাতীয় ঈদগাহে ২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের মূল প্যান্ডেলে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। এছাড়াও মুসল্লিরা মূল প্যান্ডেলের বাইরে নামাজ পড়তে পারবেন।
এবার ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশের জন্য ভিআইপি গেট থাকছে একটি। পাশাপাশি জনসাধারণের জন্য একটি এবং নারীদের জন্য পৃথক একটি গেট রাখা হয়েছে। এছাড়া, ঈদ জামাতে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ভিআইপি পুরুষ কাতার থাকবে পাঁচটি এবং নারীদের জন্য কাতার থাকবে একটি। জনসাধারণের জন্য পুরুষ কাতার থাকবে ৬৫টি বড় আকারের। ৫০টি ছোট আকারের মহিলা কাতার থাকবে। অজুখানায় একসঙ্গে প্রায় ১১৩ জন পুরুষ ও ২৭ জন মহিলা পৃথক স্থানে অজু করতে পারবেন।
জাতীয় ঈদগাহে ১০টি এয়ার কুলার ছাড়াও পর্যাপ্ত ফ্যান ও লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাবার পানি ছাড়াও থাকছে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র, ভ্রাম্যমাণ টয়লেটসহ বৃষ্টির পানি নিরসনের ব্যবস্থা।
মুসল্লিদের জন্য লাগানো হয়েছে ৬০০টি সিলিং ফ্যান, ১৫০টি স্ট্যান্ড ফ্যান, ৪০টি মেটাল লাইট এবং ৭০০টি টিউব লাইট। প্রতি কাতারে কার্পেটের ওপরে বসানো হয়েছে মখমলের বিশেষ কাপড়। কাতারগুলোর বিভিন্ন পাশে থাকছে খাবার পানি, ভ্রাম্যমাণ টয়লেট ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম। মূল গেটসহ আশপাশের এলাকা সাজানো হয়েছে রঙ-বেরঙের সাজসজ্জার কাঠামো দিয়ে।
এবার জাতীয় ঈদগাহে প্রায় ২৫০ জন অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ (ভিভিআইপি) প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ নামাজে অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া, ঈদগাহের বাইরেও অগণিত মানুষ এই জামাতে অংশ নিতে পারবেন। সুশৃঙ্খলভাবে ঈদ জামাত আয়োজনের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদগাহের সব প্রবেশ পথ এবং ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নামাজের স্থানসহ ঈদগাহ মাঠের গোটা প্যান্ডেলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। মুসল্লিদের ঈদগাহে প্রবেশের আগে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির পর আর্চওয়ে দিয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে হবে। ঈদের প্রধান জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকে র্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা ঈদগাহ ময়দানে সার্বক্ষণিক তৎপর থাকবেন। আজ বুধবার (২৮ জুন) এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, নারীদের বের হওয়ার জন্য আলাদা গেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নামাজ শেষে মুসল্লিরা বের হওয়ার সময় যেন কোনো হুড়োহুড়ি না হয়, সেজন্য পর্যাপ্ত বের হওয়ার পথও রাখা হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি হলে যেন ভেতরে পানি ঢুকতে না পারে, সেজন্য ত্রিপল দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টি হলেও জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত আয়োজনের প্রস্তুতি আছে। ইতোমধ্যে প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহার দিনে আমরা প্রতিকূল আবহাওয়ার আশঙ্কা করছি। আমরা আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে তথ্য পেয়েছি যে, ঈদের দিন ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। অতিবৃষ্টি ও ঝড় হলেও যেন মুসল্লিরা সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন, সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। কোথাও যেন পানি না পড়ে এবং পানি পড়ার জায়গায় যেন জলাবদ্ধতা না হয়, সে ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি।